পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য সাহায্য করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। তবে টাকা নিয়েই ক্ষান্ত থাকত না তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট আটকে আরও টাকা চাইত ‘বড় ভাইয়েরা’।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সময় অসদুপায় অবলম্বনের অভিনব ডিভাইসের সন্ধান পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ডিভাইস সরবরাহকারী ও জালিয়াতিতে সহযোগিতাকারী দুজনকে গ্রেফতারও করে তারা।
আদালতের নির্দেশে তাদের চারদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় তারা।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, চক্রের একটি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো থেকে ভতিচ্ছু পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে ও তাদের মধ্যে ডিভাইসগুলো পৌঁছে দেয়। আরেকটি গ্রুপ পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে পাঠায়, অন্য গ্রুপ প্রশ্নের সমাধান করে। ভর্তিচ্ছুরা যাতে ডিভাইসের বিষয়টি কারও কাছে ফাঁস না করে তাই তাদের শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন সার্টিফিকেট জমা নিত চক্রের সদস্যরা। অসদুপায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যখন শিক্ষার্থীরা ডিভাইস ফেরত দিয়ে সার্টিফিকেট আনতে যায় তখন তাদের ব্ল্যাকমেইল করে আরও টাকা চাওয়া হয়।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, পাসের পর ভর্তিচ্ছুদের সার্টিফিকেট আটকে রেখে অতিরিক্ত টাকা চাইত গ্রেফতারকৃতরা। অতিরিক্ত টাকা না দিলে তাদের ‘অসদুপায় অবলম্বনের’ বিষয়টি ফাঁস করার ভয় দেখায় তারা।
চক্রের অন্য সদস্যদের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এটি অনেক বড় একটি চক্র, আমরা মাত্র গুটিকয়েকজনকে ধরতে পেরেছি। যাদের ধরেছি তারা মিড লেভেলের। তাদের ওপর এবং নিচের লেভেলের লোকজনের বিষয়ে তথ্য নিয়ে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীদের জালিয়াতি ও অসদুপায় অবলম্বনে সাহায্য ও উৎসাহিত করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা নিজেদের সঙ্গে ‘ওমেকা’ কোচিং সেন্টারের সংশ্লিষ্টতা এবং তাদের সহায়তাকারী ঢাবির দুইজন কর্মকর্তার নাম ও পদবিও হাতে পেয়েছে সিআইডি। তবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা নয়, পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করা চক্রের সঙ্গে অনেক রাঘব বোয়ালরাও জড়িত রয়েছে। তাদের না ধরলে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না। আমরা কারিগরি সহায়তা নিয়ে তাদের ধরার চেষ্টা করছি।
এর আগে শুক্রবার পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সাহায্যের অভিযোগে ২ জনকে এবং অসদুপায় অবলম্বনকারী এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শনিবার তাদের চারদিনের রিমান্ডে নেয় সিআইডি।
শুক্রবার ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার দিন একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুন এবং শহিদুল্লাহ হল থেকে মহিউদ্দিন রানাকে গ্রেফতার করা হয়। মামুন ঢাবির ফলিত রসায়ন বিভাগের বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আর রানা ঢাবিতে পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্স করছেন। দুইজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষাকেন্দ্র ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে অসদুপায় অবলম্বনকারী ইশরাক আহমেদ রাফীকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও জালিয়াতি ও অসদুপায় অবলম্বনকারী ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।