ভর্তি না হয়েও নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী পরিচয়ে এক বছর ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এক ছাত্রী। অভিযুক্তের নাম মোফসেনা ত্বাকিয়া। মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীকে বিভাগ থেকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
বিভাগের সভাপতি উজ্জ্বল কুমার মন্ডলের সূত্রে জানা যায়, মোফসেনা ত্বাকিয়া অনিয়মিতভাবে দীর্ঘ এক বছর ধরে বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটায় ভর্তি হতে সাধারণ মেধায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে বেশি সময় লাগে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ত্বাকিয়া ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিত, কিন্তু বিভাগে ওই ছাত্রীর রোল নম্বর নিয়ে সন্দেহ হলে মঙ্গলবার বিভাগের সভাপতির কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডাকা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্রী বিভাগের সভাপতির কাছে স্বীকার করে যে তাকে একজন অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে উপাচার্য কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেবে- এমন আশ্বাসে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ হলে অবস্থান করছিল।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আল-আমিন হোসেন শাহেদকে আটক করা হয়েছে।
প্রক্টর অফিস সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মোফসেনা ত্বাকিয়ার গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নলিতাবাড়ি। ত্বাকিয়া দাবি করেন, তিনি ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে মেধা তালিকায় স্থান না পেলেও অপেক্ষামাণ তালিকায় ছিলেন। ওই শিক্ষার্থীর নানা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় আল-আমিন হোসেন শাহেদ চার লাখ টাকার বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায়। পরে তিনি ২০ হাজার টাকা দেন।
পরে শাহেদ একটি ফর্ম দেয়। সেটি তিনি পূরণ করেন। এরপর থেকে তিনি নিজেকে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে জেনে আসছিলেন। এ ছাড়া তিনি নিয়মিত বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেন। তবে তিনি জানতে পারেননি যে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন। এদিকে আল-আমিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো দোষ করিনি। ওই মেয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার মন্ডল বলেন, ‘মেয়েটি আমাদের বিভাগে ক্লাস করেছে। আমাদের প্রাথমিক সন্দেহ হলে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি সে আমাদের বিভাগের ছাত্রী না। তার ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। তার কোনো কাগজপত্র প্রশাসনের কাছে নেই।’
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ থেকে ডিন অফিস হয়ে আমাদের কাছে অভিযোগটি এসেছে। আমরা অভিযুক্ত ছেলে ও মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখন প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। তারা যা সিদ্ধান্ত নেন।