ব‌রিশা‌লে সদর উপ‌জেলা প‌রিষদ চত্ব‌রে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলায় আসামি কয়েকশ

:
: ৩ years ago

ব‌রিশা‌লে সদর উপ‌জেলা প‌রিষদ চত্ব‌রে বুধবা‌র রা‌তের সংঘর্ষের ঘটনায় দু‌টি মামলা হ‌য়ে‌ছে। একটি মামলা করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু‌নিবুর রহমান। আরেকটি করা হয়েছে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে।

এসব মামলায় ৩০ থেকে ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকশ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আটক ১৩ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন ব‌রিশাল মে‌ট্রোপ‌লিট‌ন পু‌লি‌শের কোতোয়া‌লি ম‌ডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) নুরুল ইসলাম।

তিনি জানান, ইউএনওর মামলায় তার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের অ‌ভি‌যোগ আনা হ‌য়ে‌ছে। আর পু‌লি‌শের করা মামলায় সরকা‌রি কা‌জে বাধা, পু‌লি‌শের ওপর আক্রমণ, জনগন‌কে লা‌ঞ্চিত ও ভাঙচুরের অ‌ভি‌যোগ করা হয়েছে।

এসব মামলায় দুপুরে আটক মহানগর আওয়ামী ল‌ী‌গের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু ও রুপাতলী বাস শ্র‌মিক ইউ‌নিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহ‌ম্মেদ শাহা‌রিয়ার বাবুসহ ১৩ জন‌কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনে বেলা পৌ‌নে ১২টা থেকে মোতায়েন অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা দুপুর ২টার দিকে সরে যান।

এ বিষয়ে ও‌সি নুরুল ইসলাম ব‌লেন, ‘আমা‌দের কা‌ছে তথ্য ছি‌ল, রা‌তের ঘটনার সঙ্গে যারা জ‌ড়িত ছি‌ল তাদের কেউ কেউ ওখা‌নে অবস্থান কর‌ছি‌ল। সেজন্য সেখানে যাওয়া। ত‌বে সেখা‌নে গি‌য়ে সেরকম কাউ‌কে পাওয়া যায়‌নি এবং কাউ‌কে সেখান থে‌কে আটকও করা হয়‌নি।’

যেভাবে সংঘর্ষ শুরু

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বুধবার রাতে শোক দিব‌সের ব্যানার খুলতে যান ব‌রিশাল সি‌টি করপোরেশনের কর্মচারীরা। এ সময় ব্যানার খোলার কারণ জানা নিয়ে ইউএনও মু‌নিবুর রহমানের সঙ্গে সি‌টির প্রশাস‌নিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথা-কাটাকা‌টি হয়।

প্রশাস‌নিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লী‌গের নেতা-কর্মীরা ওই সময় ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জ‌ড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে উপ‌স্থিত আনসার‌ সদস্যদের সঙ্গে হাতাহা‌তি শুরু হলে উপ‌স্থিত আওয়ামী লী‌গ, যুবলীগ ও ছাত্রলী‌গের নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় আনসার সদস্যরা গু‌লি ছুড়লে প্রশাস‌নিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ চারজন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবলীগ নেতা শাহ‌রিয়ার বাবু, হারুন অর র‌শিদ ও তানভীরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ব‌রিশাল শের-ই-বাংলা মে‌ডি‌ক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভ‌র্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষের পর ইউএনও কার্যালয়ের সামনে পু‌লিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ফের ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেন।

এ সময় পু‌লিশ ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মী‌দের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন।

ইউএনও মু‌নিবুর রহমান বলেন, ‘১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেলে করে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠ‌নিক সম্পাদক রা‌জিব আমার কম্পাউন্ডে ঢুকে ব্যানার ছিঁড়তে থাকে।

তাদের বারণ করা হলে তারা আমাকে ঘিরে ধরে। এ সময় আমার সেফ‌টির জন্য আনসার সদস্যরা যেটা প্রয়োজন সেটা করেছে।’

তি‌নি আরও বলেন, ‘ঘরে আমার বৃদ্ধ বাবা-মা করোনা আক্রান্ত। এর মধ্যে এমন ঘটনায় আ‌মি আতঙ্কিত।’

ব‌রিশালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উ‌দ্দিন হায়দার বলেন, ‘ব্যানার অপসারণ করতে হলে সেটা আমাদের আগে জানাতে পারত। এখন অনাকা‌ঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হ‌বে।’

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘ইউএনও মু‌নিবুর রহমান নিজে বন্দুক নিয়ে গু‌লি ছুড়েছে। সি‌টি করপোরেশনের লোকজন ব্যানার খুলতে আসলে এ আচরণ করেন তিনি। এতে করপোরেশনের কর্মকর্তা স্বপনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে মেয়র মহোদয় এখানে এসে নিজের প‌রিচয় দিলেও তার ওপর গু‌লি ছোড়ে ইউএনও।’

ব‌রিশাল মেট্রোপলিটন পু‌লি‌শের অ‌তি‌রিক্ত ক‌মিশনার এনামুল হক বলেন, ‘‌কিছু স্থানীয় লোকজন সদর উপজেলা প‌রিষদ প্রাঙ্গণে রাতে ব্যানার খুলতে আসে। ইউএনও সাহেব তাদের সকালে আসতে বলেন। কিন্তু তা না করে ইউএনও সাহেবের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে তারা।

‘পরে তার বাসায় হামলার চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা গু‌লি ছোড়ে। প‌রি‌স্থি‌তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পু‌লিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে। কয়েকজন পু‌লিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’

ঘটনার সময় কোনো বক্তব্য না দিলেও রাত ৩টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন সিটি মেয়র সাদিক।

তিনি বলেন, ‘বরিশালে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে প্রশাসনের লোকজন, তাতে আমার পদত্যাগ ছাড়া উপায় নেই। আমাকে তারা কাজ করতে দিচ্ছে না। কার ইশারায় এমনটা করছে তারা? আমার কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি না উনাদের কারণে। উনারা সব প্যাকড হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন।’

মেয়র জানান, ব্যানার সরিয়ে নিতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। যেগুলো সরানো হয়নি, সেগুলো অপসারণে রাতে কাজ শুরু করেন কর্মচারীরা। উপজেলা পরিষদ চত্বরে তাদের বাধা দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের রেগুলার কাজ। সেই অনুযায়ী আমার করপোরেশনের কর্মীরা রাতে উপজেলার পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন ব্যানার অপসারণে যায়। এ সময় ইউএনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের লোকজনের ওপর গুলি চালায়। এতে আমার প্রশাসনিক কর্মকর্তাও আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় আরও অনেকে।

‘খবর শোনার পর আমি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ঘটনাস্থলে পাঠাই বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য। তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদেরও গালিগালাজ করে ইউএনও।

পরবর্তীতে আমি ঘটনাস্থলে গেলে আমার ওপরও গুলি চালানো হয়। আমার শরীরেও গুলি লাগে। এর পরই আমার লোকজন আমাকে ঘিরে রাখে। আমার মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবুকেও আটকে রাখে।’

মেয়র বলেন, ‘আসলে আমি কষ্ট পেয়ে লজ্জায় সেখান থেকে বাসায় চলে আসি। প্যানেল মেয়রদের রেখে আসি, যাতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। পরে শুনি পুলিশ গিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের এলোপাতাড়ি মারধর করেছে।

‘শত শত লোক আহত হয়েছে। এমন হলে আমি কীভাবে কী করব? আমাকে এমনভাবে কেন টার্গেট করা হচ্ছে? আমাকে কেন কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না? এগুলো আমার প্রশ্ন নয়, নগরবাসীর প্রশ্ন।’

এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান মেয়র সাদিক।