বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বেহাল দশা

:
: ৭ years ago

চলতি বছর বরাদ্দ পাওয়া বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন চিত্রের বেহাল দশা। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ ব্যয়ে পিছিয়ে আছে। দুই মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্পে এক পয়সাও ব্যয় করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত) ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় এমনই চিত্র দেখা গেছে।

সোমবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কার্যপত্রে দেখা যায়, ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি নেই। একই সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ।

অন্যদিকে পিছিয়ে থাকা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, যার ৫ প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৪ প্রকল্পে ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ৪ প্রকল্পে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ। সেতু বিভাগের ৩ প্রকল্পে ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩ প্রকল্পে ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ২ প্রকল্পে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ২ প্রকল্পে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ২ প্রকল্পে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ২ প্রকল্পে ১২ শতাংশ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ কাজ হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সচিব ও প্রকল্প পরিচালকরা (পিডিরা) আশ্বস্ত করেছেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন সঠিক পথেই রয়েছে। অবশ্য অধিকাংশ পিডিই বাড়তি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। যদি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না আসে তাহলে এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণ হবে। আমাদের সম্পদের সমস্যা নেই, এখন আমাদের সমস্যা হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একটি প্রকল্পের জমি নিয়ে সমস্যা ছিল, সেটি এখন কেটে গেছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পেও গতি ফিরে এসেছে।

তিনি জানান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের একটি প্রকল্পে ৩৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একটি প্রকল্পে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ, সুরক্ষা বিভাগের একটি প্রকল্পে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, আইন ও বিচার বিভাগের একটি প্রকল্পে ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে একটি প্রকল্পে শূন্য ৯ শতাংশ, অর্থবিভাগে একটি প্রকল্পে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কাজ হয়েছে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের মোট প্রকল্পের মধ্যে বড় প্রকল্প ৯টি, যার গড় অগ্রগতি ৩০ দশমিক ৬২ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৮ প্রকল্পের ২৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের ৫ প্রকল্পে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৫ প্রকল্পে ৩৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বড় প্রকল্প
চলতি অর্থবছরে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদি উন্নয়ন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (মেট্রোরেল), সাপোর্ট টু-ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ, সাসেক রোড কানেকক্টিভিটি: ইমপ্রুভমেন্ট অব জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা রোড-৪ লেন হাইওয়ে, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারর্ড প্রজেক্ট, ঘোড়াশাল-৩ রিপাওয়ারিং প্রকল্প, কনস্ট্রাকশন অব ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, কনস্ট্রাকশন অব বিবিয়ানা-৩,৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট, খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডোয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ওয়ারল্যাস নেটওয়ার্ক স্থাপন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং পদ্মা (জলসদিয়া) ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প।

সূত্র জানায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার এডিপি হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) হতে যোগান দেয়া হচ্ছে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ধরা হয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ শতাংশ।

গত চার মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে মোট ২৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের (জিওবি) ১১ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের এক মাসে অর্থাৎ শুধু অক্টোবর মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে ৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত অর্থবছরের অক্টোবর মাসে ব্যয় হয়েছিল ৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরের এডিপির ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ।