ব্যাটিং স্বর্গে বিব্রতকর ব্যাটিংয়ে বড় হার

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

মেহেদি হাসান মিরাজের আউটকে যদি ধরা না হয় তাহলে শাহিন শাহ আফ্রিদি-নাসিম শাহদের বিপক্ষে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল চোখ ধাঁধানো, মন জুড়ানো। এক প্রান্তে মোহাম্মদ নাইম শেখ, আরেক প্রান্তে লিটন দাস; শাহিন-নাসিমদের যেভাবে দুর্দান্ত সব শটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন তাতে বার্তা দেয় দারুণ কিছুর।

 

কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সেই দারুণ ভাব আর থাকেনি। লাহোরের ব্যাটিং স্বর্গে ব্যাটারদের উইকেট উপহারে থামতে হয় দুইশ’র নিচে, মাত্র ৩৮.৪ ওভারে! দুই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম-সাকিব আল হাসানের ফিফটিতে ভর করে বাংলাদেশ ১৯৩ রানে অলআউট হয়। রান তাড়া করতে নেমে ৩৯.৩ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় স্বাগতিক পাকিস্তান।

গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) টস ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। সাকিব আল হাসান জিতেই ব্যাটিং নিতে ভুল করেননি। কিন্তু ভুল করে বসেন ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ওভারে নাসিম শাহর প্রথম বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম গোল্ডেন ডাক মেরে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। তার আউটের রেশ কেটে যায় লিটন-নাঈমের আত্ববিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে।

 

 

দুজনে মাত্র ২২ বলে ৩১ রান যোগ করেন। শাহিনের বাউন্সে খোঁচা দিয়ে ফেরেন লিটন (১৬)। বোলিংয়ে এসেই তৃতীয় বলে নাঈমকে ফেরান হারিস রউফ। এতে অবশ্য অবদান বেশি নাঈমেরই। শর্ট বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে, যা হওয়ার হলো। নাঈম ফেরেন ২০ রানে।

 

চারে নামা সাকিবের সঙ্গী তখন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু এই ডানহাতি তরুণ যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন। গত ম্যাচে শূন্যরানের পর এই ম্যাচে আড়াআড়ি ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২ রানে। এবার সাকিব প্রতিরোধ গড়েন মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে। দুজনের ব্যাটিংয়ে কোনো খুঁত ছিল না। শতরানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন চ্যালেঞ্জিং স্কোরের দিকে। তখনই ক্যারিয়ারের ৩৮তম ফিফটি করা সাকিব ফাহিম আশরাফকে পুল করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন। বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। ৫৭ বলে ৫৩ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

শামীম পাটোয়ারি এসে এক ছক্কায় ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। তখনো মুশফিক ক্রিজে থাকায় দিচ্ছিল ভরসা। ফিফটি করা মিস্টার ডিপেন্ডেবল দিতে পারেননি দায়িত্বের পরিচয়। হারিসকে খোঁচা দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৮৭ বলে এই ব্যাটার সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন। অথচ পারতেন ক্রিজে থেকে ইনিংসকে আরও লম্বা করতে। মুশফিক আউটের পর বাংলাদেশ বাকি ৩ উইকেট হারায় মাত্র ৩ রানে। আফিফ দারুণ শুরু করেও থামেন ১৬ রানে।

 

৬ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন হারিস। বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ব্যাথা পাওয়া নাসিম নেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন শাহিন, ইফতিখার ও ফাহিম।

স্কোরবোর্ডে মামুলি স্কোর তাড়া করতে পাকিস্তানের কোনো বেগ পেতে হয়নি। তবুও লড়াই করেছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন ওপেনিংয়ে নামা ইমাম-উল-হক। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ১৭ রানে ফিরলেও মোহাম্মদ রিজওয়ান জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। তুলে নেন ১১তম ফিফটি। ৭৯ বলে ৬৩ রান করেন রিজওয়ান। তার সঙ্গে ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন আঘা সালমান।

 

বল হাতে তাসকিন-শরিফুল ছিলেন দারুণ। তাসকিন ওভার প্রতি ৪ আর শরিফুল মাত্র ৩ রান দিয়ে নেন ১টি করে উইকেট। তবে হাসান ছিলেন খরুচে। তিনি ওভার প্রতি খরচ করেন ৬.৫৭ রান করেন।

 

সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচে দারুণ জয়ে শুরু করেছে পাকিস্তান। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলেও হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপের পাকিস্তান পর্ব। আফগানদের বিপক্ষে অসাধারণ জয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত হলেও সাকিবের দলের শুরুটা ভালো ছিল না। তবে হার নিয়ে বসে থাকার সময় নেই, ৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ম্যাচে কলম্বোয় প্রতিপক্ষ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। তাইতো ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়ায় সাকিব বলেছেন, ঘুরে দাঁড়ানোর কথা।