বৈরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আটক ১৬

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা বৈরুত বন্দরের কর্মী। এক সামরিক প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, ওই ভয়ানক বিস্ফোরণের ঘটনায় বৈরুতের ১৬ বন্দর কর্মীকে আটক করা হয়েছে। খবর আল জাজিরার।

সামরিক প্রসিকিউটর ফাদি আকিকি এক বিবৃতিতে বলেন, বৈরুত বন্দরের ১৮ জন স্টাফকে তদন্তের কাজে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা হয়েছিল। এদের মধ্যে ১৬ জন এখনও নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। তদন্তের কাজেই তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

আকিকি আরও জানিয়েছেন, আটক হওয়াদের মধ্যে বন্দর ও কাস্টমসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, কর্মী এবং ব্যবস্থাপক রয়েছেন। এর আগে ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ী সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দী করার নির্দেশ দেয় দেশটির সরকার।

মঙ্গলবারের ওই প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের কারণ এখনও শতভাগ নিশ্চিত না হলেও সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস, বন্দরের গোডাউনে প্রায় ছয় বছর ধরে মজুত রাখা বাজেয়াপ্ত ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বিস্ফোরণের তাণ্ডবে বৈরুত শহরের প্রায় অর্ধেকটাই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বিস্ফোরণের প্রভাব এতটাই তীব্র ছিল যে দেড়শ’ কিলোমিটার দূর থেকেও তা অনুভব করা গেছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, ওই বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের খুুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটিকে চারদিনের সময় দিয়েছে লেবানন সরকার।

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চার্বেল ওয়েহবে একটি রেডিও চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণে দোষীদের খুঁজে বের করতে চারদিনের সময় দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপ ১ রেডিওকে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বৈরুত বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কমিটিকে সর্বোচ্চ চারদিনের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কারা এর পেছনে দায়ী, কখন, কিভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটল সে বিষয়ে তদন্ত করা হবে। এটা একটি গুরুতর বিষয় এবং আমরা এটা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছি।

যারা এই ভয়ানক অপরাধের জন্য দায়ী তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৫৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া আরও পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, বৈরুতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল বানাচ্ছে জর্ডান। দেশটির বিমানবাহিনীর দু’টি বিমানে করে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ ওই হাসপাতালে ১৬০ জন মেডিকেল কর্মী ও চিকিৎসক থাকবেন। এছাড়া সেখানে ৪৫টি শয্যা, ১০টি ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট এবং দু’টি সার্জারি রুম থাকবে।

এদিকে, ইতালি, ইরান, কাতার, কুয়েত, ইরাক, ফ্রান্স-সহ বিভিন্ন দেশও বিপর্যস্ত লেবাননের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই এর মধ্যেই খাদ্য, মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠিয়েছে আবার কোনো কোনো দেশ সহায়তা পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে।

ইতালি থেকে দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ৮ টন মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, লেবানন সরকারের অনুরোধে বৃহস্পতিবার সকালে মেডিকেল সরঞ্জাম বহনকারী দ্বিতীয় বিমানটি ব্রিনদিসি থেকে বৈরুতের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

ওই ফ্লাইটে সার্জিক্যাল এবং ট্রমা কিট পাঠানো হয়েছে। এর আগের ফ্লাইটে দমকল বাহিনী, কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকদের একটি দলকে বৈরুতে পাঠানো হয়।

এছাড়া ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ উদ্ধারকারী দল ও মানবিক সহায়তা নিয়ে বৈরুতে পৌঁছেছেন। অপরদিকে, বিস্ফোরণের পরপরই বেশকিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করছেন। বিস্ফোরণের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর একটি টুইট ঘিরে এই জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে।

মঙ্গলবার ইসরায়েলের রামলি শহরে দেশটির সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি পরিদর্শনের পরপর এক টুইট বার্তায় সতর্ক করে দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, আমরা আস্তানায় আঘাত করি এবং এখন প্রেরণাদানকারীদের আঘাত করছি। আত্মরক্ষার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবো। আমি হিজবুল্লাহসহ তাদের সবাইকে বিষয়টি বিবেচনার পরামর্শ দিচ্ছি।

এই বিস্ফোরণে ইসরায়েল জড়িত থাকার সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে কারণ দেশটির সাবেক এক সংসদ সদস্য বৈরুতের ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণের ঘটনা ‘স্রষ্টার উপহার’ বলে মন্তব্য করে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি এই উল্লাস প্রকাশ করেন।

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের সাবেক সদস্য ফেইজলিন ফেসবুকে দেয়া পোস্টে বৈরুতে প্রাণঘাতী ওই বিস্ফোরণের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানান। ওইদিন ইহুদির একটি বিশেষ বাৎসরিক উৎসব ছিল।

এই উৎসবের দিনের বৈরুতে বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে তিনি বলেন, আজ ‘তু বি আভ’ উৎসব। একটি আনন্দের দিন। আমাদের ভালোবাসার দিনে এমন দুর্দান্ত উদযাপনের আয়োজন করায় সৃষ্টিকর্তা এবং সব মেধাবী ও সত্যিকারের নায়ক; যারা আয়োজন করেছিলেন তাদের অনেক ধন্যবাদ।