বৃষ্টি-জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বরিশালের বিভিন্ন এলাকা

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সৃষ্ট জোয়ার ও বৃষ্টিতে বরিশাল নগরীসহ জেলার বিভিন্ন চর এবং নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানির কারণে কয়েকদিন ধরেই দুর্ভোগে আছেন চর ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। এর মধ্যে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে বৃষ্টি।

বরিশালে রোববার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে কীর্তনখোলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহন ও চরমোনাই ইউনিয়নে অনেক বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।

এছাড়া জেলার বেশিরভাগ নদ-নদীর বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে মেঘনা তীরবর্তী উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সন্ধ্যা নদীর ফেরিঘাটের দুই পাড়ে গ্যাংওয়ে পানিতে ডুবে গেছে। বিঘ্নিত হচ্ছে ফেরি চলাচল।

উপজেলা শহরের রাস্তাঘাটে কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানি জমেছে। নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টি ও পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ওই চার উপজেলার চরাঞ্চলের হাজারো মানুষ।

তাছাড়া নগরীর নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত কীর্তনখোলা তীরের জনপদ সাগরদী ধান গবেষণা সড়ক, পূর্ব রুপাতলী, জাগুয়া, ভাটিখানা, নিউ ভাটিখানা, আমানতগঞ্জ, রসুলপুর, পলাশপুর, নবগ্রাম রোডের কিছু এলাকাসহ আরও অনেক এলাকায় হাঁটু পানি দেখা গেছে।

সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন কীর্তনখোলা তীর সংলগ্ন রসুলপুর, কলাপট্টি, পলাশপুর, বরফকল ও স্টেডিয়াম বস্তির বাসিন্দারা। ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নদীর সঙ্গে সংযোগ থাকা ড্রেন দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম বলেন, নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের কারণে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। কীর্তনখোলা নদীর পানি বিকেল ৪টার দিকে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্ষায় জোয়ারের সময় আগেও নগরীতে পানি উঠেছে, তবে এবার নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানির পরিমাণ বেশি। এ কারণে নগরীর মধ্যে জোয়ারের পানির বিস্তৃতিও বাড়ছে। জোয়ারের পানি প্রাকৃতিক নিয়মে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টায় নগরীতে ওঠে আর বাকি পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার ভাটায় নেমে যায়। ওই সময়ে বৃষ্টিপাত না হলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী হওয়ার কথা নয়।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সেটি ভারতের ওড়িশায় আছে। নিম্নচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) বরিশালে ৭৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বরিশাল নগরীর সদর রোড এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, গত কয়েকবছর ধরে কীর্তনখোলা নদীর পানি বৃদ্ধি এবং ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই সদর রোডের একটি অংশ ও তার বাড়ির আশপাশ তলিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নগরীর সব ড্রেনের সংযোগ কীর্তনখোলার সঙ্গে। তবে এগুলোর লেভেল ঠিক নেই। যে কারণে কীর্তনখোলার পানি অনায়াসে ড্রেন দিয়ে নগরীর মধ্যে প্রবেশ করছে।

নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বরিশাল নগরী ও আশেপাশে এক সময় ২২টি খাল ছিল। খালের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ কিলোমিটার। পুকুর ছিল প্রায় ২০ হাজার। যার মধ্যে ১০ হাজারের বেশি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি খাল ভরাট করে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এখন ৬-৭টি খালের অস্তিত্ব আছে। তবে ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই খালগুলোতেও পানির প্রবাহ স্বাভাবিক নেই। তাছাড়া প্রায় আধাকিলোমিটার প্রশস্ত কীর্তনখোলা নদীও কোথাও কোথাও দখলের কারণে ছোট হয়ে গেছে। নাব্যতা রক্ষায় নিয়মিত খনন করা হয় না। এসব কারণেই এখন জোয়ার ও বৃষ্টিতে বরিশাল নগরী প্লাবিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নগরীর সাতটি খাল সংস্কার ও খননে পাউবো সাত কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে সিটি করপোরেশন ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। খালগুলো খনন হলে জলাবদ্ধতা হয়তো অনেকাংশে কমে যেত।