ময়মনসিংহের ভালুকায় গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত হওয়া চার শিক্ষার্থীর পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শনিবার দুপুর ২টা থেকে প্রশাসনিক ভবন চত্বরে ও ভবনের প্রতিটি তলায় এই অনশন শুরম্ন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়।
সিন্ডিকেট সভায় প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং সিন্ডিকেট সদস্যদের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে কয়েক ঘন্টা। এদিকে নিহতদের স্মরণে গতকাল শনিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিন দিনের শোক কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরম্ন হয়। পরে কালো ব্যাজ ধারণ করে বেলা সাড়ে ১২টায় দুর্ঘটনার বিষয়ে করণীয় নিয়ে সিন্ডিকেটের সভা শুরু হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত জানান, ‘নিহত ৪ জনের পরিবারই গ্রামের দরিদ্র পরিবার। সারাজীবনের সব উপার্জন খরচ করে তারা ছেলেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার মতো কোনো সদস্য পরিবারগুলোতে নেই। সিন্ডিকেট সদস্যরা পরিবারগুলোর সঙ্গে তামাশা করেছে। রোববার দুপুর ১টার মধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হলে আমাদের অনশন চলবে। রোববার দুপুর একটায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলমগীর বলেন, এতো টাকা দেওয়ার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। আমি সিন্ডিকেটের সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেছি। সভায় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাড়ির মালিক ও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান, প্রতিটি পরিবার থেকে একজন সদস্যকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রত্যেক পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, ‘ভবিষ্যতে যাদেরকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টে পাঠানো হবে, তাদেরকে ইন্সুরেন্সের আওতায় আনার বিষয়েও সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়েছে। এগুলো ছাত্রদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে। তারা আমাদের কথা শুনছে না। কিন্তু এর বেশি কিছু করার ক্ষমতাও আমার নেই।’ কুয়েটের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের টেপটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪ শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবনের চূড়ান্ত্ম পর্বে এক মাসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্টের (ইন্টার্ন) জন্য গিয়েছিলেন ময়মনসিংহের ভালুকায়। সেখানে গত ২৪ মার্চ গ্যাস লাইন বিস্ম্ফোরণে গুরম্নতর দগ্ধ হয়ে মারা যান তৌহিদুল ইসলাম, শাহীন মিয়া, হাফিজুর রহমান এবং দীপ্ত সরকার।