বিসিসি সাবেক মেয়র কামাল-রুপম-মোতালেবের দুর্নীতি তদন্তে নেমেছে দুদক

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ক্ষমতার অপব্যবহার, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া, কাজ শেষের আগে বিল উত্তোলন, জাল সার্টিফিকেটে চাকরীসহ বিভিন্ন অভিযোগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, মেয়রের আলোচিত পুত্র ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যে পৃথক দুজন তদন্ত কর্মকর্তাও নিয়োগ দিয়েছে দুদক। দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত উদঘাটনে অভিযোগের অনুকূলে বিসিসি থেকে কাগজপত্র কর্মকর্তাদের সরবারহ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত বাবলু।

তিনি জানান, দুদকের চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাগজপত্র গত সপ্তাহ থেকে দুদকে প্রেরণ শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, আহসান হাবিব কামাল ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিসিসির মেয়র ছিলেন। এসময়কালীন তার বিরুদ্ধে ছেলে কামরুল আহসান রুপমের চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং অনুগত আরও দুইজন ঠিকাদারকে শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিনিময়ে মেয়র কামাল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১০ পার্সেন্ট হারে কমিশন নিয়েছেন।

অপরদিকে আহসান হাবিব কামাল মেয়র থাকাকালীন মোতালেব হাওলাদার বিএসসি পাসের জাল সনদপত্র ব্যবহার করে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া উন্নয়ন কাজের কমিশনসহ গ্রহণ করে অবৈধপন্থায় সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে মোতালেব হাওলাদারের বিরুদ্ধে। কামালের মেয়াদ শেষে নতুন নির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পর মোতালেব হাওলদারকে পদাবনতি করে ফের নির্বাহী প্রকৌশলী করা হয়। তিনি বতর্মানে বিসিসিতে ওএসডি অবস্থায় আছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আহসান হাবিব কামালের দুর্নীত তদন্তে বরিশাল দুদকের উপ-পরিচালক দেবব্রত মন্ডল এবং প্রকৌশলী মোতালেব হাওলাদারের দুর্নীতি তদন্তে উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন। তাদের চাহিদা অনুযাযী ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, প্রাক্কলন, মূল্যায়ন প্রতিবেদন, কার্যাদেশ, বিল ভাইচার ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বর ও নথির ফটোকপি নগর ভবন থেকে দেয়া হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল তার ছেলে কামরুল আহসান রুপমের মালিকানাধীন ৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাগিয়েছেন। তবে অনেক কাজ সম্পন্ন না করেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পুুরো বিল দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ২০৮ প্রকল্পের বিল প্রদান করা হয়েছে। বিনিমিয়ে মেয়র কামাল ১০ ভাগ হারে কমিশন পেয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেন।

মেয়র কামাল প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যাদেশ দিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিকদার এন্টারপ্রাইজ, মিতুশী এন্টারপ্রাইজ, রশিদ অ্যান্ড সন্স, এরিমা ট্রেডিং করপোরেশন, মেসার্স জেড.এ এন্টারপ্রাইজের নামে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে কতগুলো কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে তার তালিকা এখন দুদকের হাতে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এদের মধ্যে জেড এন্টারপ্রইজের স্বত্ত্বাধীকারি হচ্ছেন সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠজন আলতাফ হোসেন (হাজী আলতাফ) এবং অপর প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করেন যুবদল নেতা মোমেন সিকদার। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে উন্নয়ন প্রকল্প কার্যাদেশ দেয়া হলেও নেপথ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন মেয়র পুত্র রুপম ও তার জামাতা। দুদুক ৮টি প্রকল্পের ব্যয়, কাজের বর্তমান অবস্থা ও চূড়ান্ত বিলের ভাউচার চেয়েছে। সুনির্দিষ্ট ওই কাজ ৮টি হলো, বরিশালের দুটি সিটি গেট, নথুল্লাবাদ থেকে আমতলার মোড় চার লেনের সৌন্দর্য বর্ধন ও সিমেন্টেড সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট বৃক্ষ রোপন, বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্স, নথুল্লাবাদ ব্রীজ থেকে কুদঘাটা ব্রীজ, রাজা বাহাদূর সড়কের সৌন্দর্য বর্ধন ও বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন পার্কের উন্নয়ন প্যাকেজ।

এসব অভিযোগ এবং দুদকের তদন্ত প্রসঙ্গে জানতে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের মুঠোফোনের দুটি নম্বরে বার বার কল দেয়া হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মোতালেব জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে আমাকে তলব করা হলে আমি লিখিতভাবে দুদককে উত্তর দেব। তিনি এখন পর্যন্ত দুদকের কোন নোটিশ পাননি বলে দাবী করেন।

জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী মোতালেব হাওলাদারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগগুলো হচ্ছে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সনদ সংগ্রহ করে তার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে ওই বছর পদোন্নতি নিয়েছিলেন।

পরে অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিকে ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ আব্দুল মোতালেব ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ জমা দিয়েছেন ২০১৫ সালের। অর্থাৎ ৪ বছর মেয়াদী কোর্সের সনদ আব্দুল মোতালেব অবৈধভাবে পেয়েছেন মাত্র এক বছরের মধ্যে।

ফলে প্রমাণিত হয় যে আব্দুল মোতালেবের বিএসসি-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সনদ ভূয়া। এছাড়া তার বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজে নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্য করে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।