বিসিসি নির্বাচনে বাঘা বাঘা কাউন্সিলররা নতুন প্রার্থীর কাছে ধরা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরিশাল সিটি নির্বাচন-২০১৮তে দুই-তিনবারের বাঘা বাঘা কাউন্সিলররা নতুন নতুন প্রার্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। কোথায়ও কোথায়ও চারবারের জনপ্রতিনিধিও নব্য প্রার্থীদের কাছে হার মেনেছেন। তবে শক্তিশালী এসব জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সিল মেরে তারা জয়ী হয়েছেন। যদিও নতুন কাউন্সিলররা বলছেন, এ প্রজন্ম পুরনো প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করছেন। যার কারণে তাদের এই পরাজয়।

নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত কাউন্সিলর বিএনপির প্রার্থী আলতাফ মাহমুদ সিকদার ১৯৯৫ সাল থেকে এই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি।

কিন্তু এবার এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুবলীগ নেতা শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার কাছে হেরে গেছেন। ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আলতাফ মাহমুদ সিকদার বলেন, ‘আমি ১৯৯৫ সাল থেকে এখানকার জনপ্রতিনিধি। জনগণের সুখে দুঃখে তাদের পাশে থাকার কারণে এমনটি হয়েছে।

কিন্তু ভোট ডাকাতি ও সন্ত্রাসীপনার কাছে আমিসহ এই ওয়ার্ডের ভোটাররা পরাজিত হয়েছে। তবে ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে জয়ী হওয়া শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না বলেন, রাজনীতি ও নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে এই ওয়ার্ডের জনগণ তাকে কাছে পায়নি।

ওয়ার্ডের আশা আকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যে জনগণের রায়ে আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। নতুন প্রজন্ম পুরাতন প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। একইভাবে নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়া কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি নেতা আলহাজ কেএম শহীদুল্লাহ এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। সেখানে তার পূর্বের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. জাকির হোসেন ভুলু এবার নির্বাচিত হয়েছেন। আলহাজ কেএম শহীদুল্লাহ বলেন, আমি এই ওয়ার্ডটিকে একটি মডেল ওয়ার্ডে পরিণত করেছি।

কিন্তু আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী ভোট ডাকাতি করে আমার নিশ্চিত জয়কে হারিয়ে দিয়েছে। কিশোর মজলিসের একটি কেন্দ্রে ইভিএম নষ্ট হওয়ার পর সেখানে ব্যালটে নির্বাচন হয়। আর ব্যালট পিটিয়ে ভোট নিয়ে গেছে। তবে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন ভুলু বলেছেন, জনগণের ভোটে আমি নির্বাচিত হয়েছি। কোনো ভোট ডাকাতি হয়নি।

বরিশাল সিটি এলাকার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ বছরের বিএনপির প্রার্থী মো. হুমায়ুন কবিরকে হারিয়ে সেখানে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী (ঠেলাগাড়ি প্রতীক) মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

বিএনপি নেতা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমি ২০০১ সাল থেকে এখানকার জনপ্রতিনিধি। ভোট পিটিয়ে আমাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছি। পরাজিত হয়ে আমার প্রতিপক্ষ নানা কুৎসা রটনা করছেন। বরিশাল সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির শক্ত প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন হাওলাদারকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির। বিএনপি নেতা মো. ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমি তিনবারে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি এই ওয়ার্ডে। কিন্তু সরকারদলীয় প্রার্থীর ভোট জালিয়াতিতে আমাকে হারতে হয়েছে।

নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির ২৭ বছরের কাউন্সিলর প্রার্থী ফিরোজ আহমেদকে হারিয়ে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ মো. আনিছুর রহমান। বিএনপি নেতা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমি ২৭ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি আছি। রাস্তাঘাট উন্নয়ন করে ওয়ার্ডকে উন্নত করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভোট পিটিয়ে আমাকে হারিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতা ও নব্য কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমান বলেন, ভোটযুদ্ধে হেরেছে বিএনপি। এখন আবলতাবল বলছে।

নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন মুখ হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা কেফায়েত হোসেন রনি। এখানে ১৫ বছরের পুরাতন প্রার্থী মো. মাইনুল হককে হারিয়ে তিনি জয়ী হয়েছেন। যদিও এখানেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তার পরও ভোটযুদ্ধে রনি জয়ী হয়েছেন। নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডেও বিএনপির একধিকবার নির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ সাইদুল হাসান মামুনকে হারিয়ে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আমির হোসেন বিশ্বাস।