দুবাই ইন্ট্যারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া ডাইনিংয়ে প্রবেশ করতেই চমকে গেলাম। টেবিলে বসা ক্রিকেটের কিংবদন্তী ক্লাইভ লয়েড। যার গল্প প্রতিনিয়তই পত্র-পত্রিকায় কিংবা ইন্টারনেটে পড়েছি-তিনি হাত ছোঁয়া দূরত্বে! বিশ্বাস করার জন্য নিজের গায়ে নিজে চিমটি দিতে হলো।
করোনাকালীন এই বিশ্বকাপ যেন বোতলবন্দি। ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট যারাই আছেন সবাই থাকেন জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে, চার দেয়ালে বন্দি। না যায় ধরা…না যায় ছোঁয়া! ক্লাইভ লয়েডকে এতো কাছে পেয়ে তার সঙ্গে কথা না বলে কী থাকা যায়? থাকা গেল না।
সত্তর ও আশির দশকের শুরুতে ক্রিকেট বিশ্ব রাজত্ব করা এই ব্যাটসম্যান দুবাইয়ে এসেছেন নিজ দলের খেলা দেখতে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে আইসিসির অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দেখতে। প্রথম ম্যাচে নিজ দলের অসহায় আত্মসমর্পণ নিয়ে তার মন খারাপ। বিব্রতও ছিলেন এই সাবেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কণ্ঠে সেই পুরোনো তেজ। মনে হচ্ছিল শরীরে শক্তি থাকলে এখনই ব্যাট-প্যাড নিয়ে নেমে পড়বেন ২২ গজে।
পরিচয় দিয়ে কথা বলার আগ্রহ দেখালে শুরুতেই বললেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ম্যাচে হার নিয়ে আমি খুবই বিব্রতবোধ করছি। হারার তো একটা ধরণ থাকে। তাই বলে মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হয়ে যাবে! এটা হতে পারে না। আমি জানি, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামর্থ্য আছে। তারা যেকোনো সময় যেকোনো দলকে হারানোর সক্ষমতা রাখে।’
কথার প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনাও হয়। জানালেন বাংলাদেশ বিশ্বকাপে বড় কিছু করতে পারে। যুক্তি হিসেবে দেখালেন, ঠিক বিশ্বকাপের আগে নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি। তার মতো একজন ক্রিকেট কিংবদন্তীর কাছে যে এসব বিষয় নখদপর্ণে থাকবে তা অনুমিতই। ক্রিকেটেই যার ধ্যান-জ্ঞ্যান তিনি তো জানবেনই ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো কোথায় কী করছে।
বাংলাদেশকে নিয়ে দারুণ সম্ভাবনার কথা জনিয়ে লয়েড বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের দারুণ সম্ভাবনা। দেশটি দ্রুত অনেক বড় কিছু করতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। ঘরের মাঠে তারা অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়েছে বিশ্বকাপের আগেই।’
১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ক্লাইভ লয়েড ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ দুটি বিশ্বকাপ তার নেতৃত্বে ঘরে তুলেছিল ক্যারিবীয়রা। পরেরবার ১৯৮৩ সালেও ফাইনালে উঠেছিল, কিন্তু সেবার কপিল দেবদের কাছে হার মানতে হয়। ১৯৭১ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন লয়েড। ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বরে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু। তারও ৭ বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার থেমে যায় ১৯৮৫ সালে। জানুয়ারিতে টেস্ট জার্সি তুলে রাখেন। মার্চে রঙিণ পোশাক।
১১০ টেস্টে ৪৬.৬৭ গড়ে ৭ হাজার ৫১৫ রান করেছেন লয়েড। সেঞ্চুরি ১৯টি, হাফসেঞ্চুরি ৩৯টি। সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৪২। ৮৭ ওয়ানডেতে ৩৯.৫৪ গড়ে করেন ১৯৭৭টি। সেঞ্চুরি ১টি, হাফসেঞ্চুরি ১১টি।
সাদাপোশাকের ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিশ্চিতভাবেই থাকবেন লয়েড। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে তার জানাশোনাও কম নয়।
সাফ জানিয়ে দিলেন, এ ফরম্যাটে যা করার পাওয়ার প্লে’তেই করতে হবে। অন্যথায় বিপদ! তার মুখ থেকেই শুনুন বাকিটা, ‘সমস্যা হচ্ছে শুরুটা ভালো না হলে বিপদ। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লে’তে ভালো করতেই হবে। শুরুটা ভালো হলে, স্কোরটা স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়ে যায়। টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চয়তা খুবই বেশি। তবে একজন ক্রিকেটারকে নিজের কাজটা তো ঠিকঠাক করতে হবে। সেক্ষেত্রে সফলও হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।’
লয়েডের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ শুরু হয়নি। প্রথম ম্যাচে বিব্রতকর হারের কারণে তার মন খারাপ ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেও একই পরিণতি। পোলার্ডের দল হেরেছে ৮ উইকেটে! টানা দ্বিতীয় হারে লয়েডের মন যে কাঁদছে নিশ্চয়ই।