বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন: বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের স্তম্ভিত করে আফগানদের গর্জন

লেখক:
প্রকাশ: ৯ মাস আগে

রশিদ খানের ঘূর্ণি পড়তে না পেরে খোঁচা দিয়ে বসেন আদিল রশিদ। প্রথম স্লিপে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেন মোহাম্মদ নবী। শূন্যে ভেসে উদযাপনে মেতে ওঠেন রশিদ। অষ্টম উইকেটের পতনের পর মার্ক উডকে সঙ্গে নিয়ে ক্যামিও ইনিংসে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন আদিল। তাকে ফেরানোর পর উডকে বোল্ড করে কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন সেই রশিদই।

 

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ব্যাটে-বলে কর্তৃত্ব দেখিয়ে চলতি বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন ঘটালো আফগানিস্তান। দিল্লিতে সুপার সানডেতে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৮৪ রানে অলআউট হয় আফগানরা। তাড়া করতে নেমে ২১৫ রানে থেমে যায় ইংলিশদের রানের চাকা। ৬৯ রানের বড় জয়ে ইতিহাস গড়েন রশিদ-নবীরা।

 

 

চলতি বিশ্বকাপে আফগানদের এটি প্রথম জয়। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। ১৪ ম্যাচ পর তারা বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পেলো। জয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ১৮ ম্যাচ অপেক্ষা করতে হয়েছিল জিম্বাবুয়েকে। চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে শুরু হয়েছিল আফগানদের বিশ্বকাপ। দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ভারত এই দিল্লিতেই তাদের উড়িয়ে দেয়। তৃতীয় ম্যাচে এসে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ডকে রুখে দিলো তারা। এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে খেলে উভয় দলেরই জয় একটি করে।

দিল্লির উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সুবিধা করতে পারেননি ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। আফগান স্পিন ত্রয়ী রশিদ-নবী-মুজিব উর রহমানদের ঘূর্ণির জবাব ছিল না যেন জস বাটলারের দলের কাছে। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট করে নিয়েছেন রশিদ-মুজিব। নবী নেন ২ উইকেট। ব্যাট হাতে ২৮ রানের পাশাপাপাশি ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন মুজিব।

 

 

এই তিন স্পিনারই নেন ৮ উইকেট, বিপরীতে দেন মাত্র ১০৪ রান! এখানেই হেরে যায় ইংলিশরা। বাকি ২ উইকেট নেন ফজল হক ফারুকি ও নাভিন উল হক। এর আগে ইংলিশরাও স্পিন দিয়ে চাপে ফেলে আফগানদের, তারা ৯৪ রান দিয়ে নেয় ৫ উইকেট।

শুরু থেকে ইংল্যান্ড ছিল চাপে। দলীয় ৩ রানে ফেরেন জনি বেয়ারস্টো (২)। সেই ধাক্কা সামাল না দিতেই বোল্ড হয়ে ফেরেন অন্যতম ভরসা জো রুট (১১)। তখনও ডেবিড মালান ক্রিজে থাকায় ইংল্যান্ড ছিল স্বস্তিতে। কিন্তু ৩২ রানে মালান ফেরায় বিপাকে পড়ে ইংলিশ শিবির। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা।

 

এক প্রান্তে আগলে রেখেছিলেন হ্যারি ব্রুক। কিন্তু অন্য প্রান্তে ছিল নিয়মিত আসা-যাওয়ার মিছিল। ৩৫ রানে বেশি রান আসেনি কোনো জুটি থেকে। ব্রুক সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেন। লিভিংস্টোন-কারান ১০ ও বাটলার ফেরেন ৯ রানে। শেষ দিকে আদিল ২০, উড ১৮ ও টপলি ১৫ রানে অপরাজিত না থাকলে হারের ব্যবধান আরও বড় হতে পারতো!

 

 

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে রহমানুল্লাহ গুরবাজ-ইবরাহিম জাদরানের ব্যাটে ঝড়ো শুরু করে আফগানরা। পাওয়ার প্লেতে বিশ্বকাপে তারা রেকর্ড ৭৯ রান করে। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ৬১। মাত্র ৩৩ বলে আফগানিস্তানের তৃতীয় ওপেনার হিসেবে বিশ্বকাপে ফিফটি করেন গুরবাজ। দুই ওপেনার জুটিতে যোগ করেন ১১৪ রান। ইব্রাহিমের (২৩) আউটে ভাঙে এই জুটি।

ইব্রাহিম আউট না হতেই ৮ রানের ব্যবধানে আরও ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান। রহমত শাহ ৩ রানে ফেরার পর গুরবাজ সর্বোচ্চ ৮০ রানে ফেরেন রানআউট হয়ে। থেমে যায় মাত্র ৫৭ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছয়ে সাজানো দুর্দান্ত এক ইনিংস।

মাঝে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। তখন এক প্রান্ত আগলে রাখেন ইকরাম আলীখিল। রশিদ খানের সঙ্গে জুটি গড়ে ৪৩ ও মুজিব উর রহমানের সঙ্গে জুটিতে মাত্র ২৫ বলে ৪৪ রান যোগ করেন। আলীখিল ৬৬ বলে ৫৮ রান করেন। রশিদ ২২ বলে ২৩ ও মুজিব ১৬ বলে ২৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন।

আদিল রশিদ ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ ৩ উইকেট নেন। ২ উইকেট নেন মার্ক উড। ১টি করে উইকেট নেন রিচ টপলি, লিয়াম লিভিংস্টোন ও জো রুট।