‘বিশেষ প্রণোদনা’ প্রজ্ঞাপন জারি, ১ জুলাই থেকে কার্যকর

:
: ১২ মাস আগে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। চলতি জুলাই মাসের বেতনের সঙ্গে এই প্রণোদনা যোগ হবে। তবে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা এ ‘বিশেষ সুবিধা’ পাচ্ছেন না।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

 

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ১৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতন-স্কেলসমূহের আওতাভুক্ত সরকারি-বেসামরিক, স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ, ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত কর্মচারী এবং পেনশনভোগী ব্যক্তিবর্গকে ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান করা হলো। এ ‘বিশেষ সুবিধা’ চাকরিরতদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ হাজার এবং পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা হারে দেওয়া হবে।

এ ‘বিশেষ সুবিধা’ যেভাবে কার্যকর হবে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে-

 

ক. চাকরিরত কর্মচারীগণ ২০২৩ সালের ১ জুলাই তারিখ থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে প্রাপ্য মূল বেতনের ওপর ৫ শতাংশ হারে, তবে ১ হাজার টাকার কম নয় ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন।

খ. অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা কর্মচারীগণ পিআরএল গমনের পূর্বকালীন সর্বশেষ প্রাপ্ত মূল বেতনের ভিত্তিতে উপরিউক্ত হারে, তবে ৫০০ টাকার কম নয় ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন।

গ. পুনঃস্থাপনকৃত পেনশনারগণসহ সরকার থেকে পেনশন গ্রহণকারীরা প্রতিবছর ১ জুলাই তারিখে নীট পেনশনের ওপর ৫ শতাংশ হারে, তবে ৫০০ টাকার কম নয় ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন।

 

ঘ. যেসব অবসর গ্রহণকারী কর্মচারী তাদের গ্রস পেনশনের ১০০ শতাংশ অর্থাৎ সম্পূর্ণ অংশ সমর্পণ করে এককালীন আনুতোষিক উত্তোলন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে এ ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রযোজ্য হবে না।

ঙ. জাতীয় বেতনস্কেলে নির্ধারিত কোনও গ্রেডে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল বেতনের ভিত্তিতে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, এ ধরনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ব্যক্তি পেনশনভোগী হলে নীট পেনশন অথবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত পদের মূল বেতনের ভিত্তিতে যে কোনও এক ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

 

চ. সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মচারীগণ সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার তারিখের অব্যাহতি পূর্বেও মূল বেতনের ৫০ শতাংশ (অর্ধেক) এর উপর ৫ শতাংশ হারে এ ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবেন।

ছ. বিনা বেতনে ছুটিতে থাকাকালীন কর্মচারীগণ এ ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রাপ্য হবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব বাজেট থেকে প্রদত্ত অনুদানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য স্ব-শাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের এ ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান বাবদ প্রয়োজনীয় ব্যয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিজস্ব বাজেট থেকে মেটাতে হবে।

জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণও এই প্রজ্ঞাপনের আওতায় ৫ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে। তবে তাদের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা খুব শিগগির দেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।

দেশে বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। আরও আছে কয়েক হাজার পেনশনভোগী সরকারের সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। অন্যদিকে, দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৩০ হাজার। এগুলোয় শিক্ষক-কর্মচারী আছেন পাঁচ লাখের বেশি। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৫ জন। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ১ লাখ ৬৫ হাজারের মতো। আর কারিগরিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ২০ হাজারের বেশি। সরকারি চাকরিজীবীদের মত তারাও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, ঈদ ভাতা ও বৈশাখী ভাতা পেয়ে থাকেন।

অবসরভোগীরা পেনশনের পাশাপাশি দুই ঈদে ভাতা, বৈশাখী ভাতা, চিকিৎসা ভাতা পেয়ে আসছেন। এর আগে, ২০১৮ সালে ৮ অক্টোবর শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পেনশন ১৫ বছরে পুনঃস্থাপনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, যারা তাদের শতভাগ পেনশন সরকারের কাছে সমর্পণ (বিক্রি) করেছেন তাদের অবসরকালীন মেয়াদ ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আবার পেনশনের আওতায় ফিরে আসবেন। জানা গেছে, এদের সংখ্যা বর্তমানে ১০ হাজারের নিচে রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের। ২০১৫ সালে মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৫ শতাংশ ছিল বলেই ইনক্রিমেন্ট একই হারে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছিল।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ৭৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। বাজেট সংক্ষিপ্তসার ২০২৩-২০২৪ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।