দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণে বৈষম্যের কারণে দেশের অন্যান্য রুটের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া দিয়ে বিমানে উঠতে হয় বরিশাল এবং যশোরের যাত্রীদের। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চলছে এ অবস্থা।
বিষয়টি নিয়ে যাত্রীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি গত মাসে বরিশালে আসা বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কর্তৃক নির্ধারিত আখ্যা দিয়ে যখন-তখন ভাড়া আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এ দুই রুটে চলাচলকারী সরকারি-বেসরকারি বিমান সংস্থা। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় আকাশপথে ঢাকা যেতে বাধ্য হচ্ছে বরিশাল-যশোরের সাধারণ যাত্রীরা।
দেশের অভ্যন্তরে যে কটি রুটে রাজধানী ঢাকা থেকে বিমান চলাচল করে তার মধ্যে সবচেয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে রুট হচ্ছে ঢাকা-বরিশাল। দৈনিক গড়ে ৪টি ফ্লাইট পরিচালিত হওয়া এ রুটের দূরত্ব ৬১ অ্যারোনটিক্যাল মাইল। দ্বিতীয় স্বল্পদৈর্ঘ্যরে রুট ঢাকা-যশোরের দূরত্ব ৭৯ অ্যারোনটিক্যাল মাইলের কিছু বেশি। অথচ এ দুই রুটের যাত্রীদের বিমানে ওঠা প্রশ্নে গুনতে হয় ঢাকা থেকে ১৪৬ অ্যারোনটিক্যাল মাইল দূরত্বে থাকা সৈয়দপুর রুটের সমান ভাড়া। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় বেবিচক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভার পর থেকেই চলছে এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। অথচ আকাশ পথের দূরত্বের বিচারে ভাড়া অনেক কম হওয়ার কথা ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-যশোর রুটে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিমানের ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা ‘প্রাইসিং বিভাগ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছরের শেষের দিকে বেবিচকের চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিমান সংস্থার এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ভাড়া নিয়ে আলোচনা হলে একাধিক বিমান সংস্থা অভিযোগ করে যে, প্রতিযোগিতার নামে কেউ কেউ অনেক কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণ করছে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছে একাধিক বিমান কোম্পানি। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে যাত্রী ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান তারা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সভায় সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বিমান চলাচল প্রশ্নে সর্বনিু ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ২শ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাটসহ আনুষঙ্গিক যোগ করে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ৩ হাজার। বর্তমানে এ হারেই চলছে বিভিন্ন রুটে সরকারি-বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর ভাড়া আদায়।’
সমন্বয় সভার ওই সিদ্ধান্তে দেশের অন্যান্য রুটের বিমানযাত্রীরা লাভবান হলেও বিপাকে পড়েছে ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা যশোর রুটের যাত্রীরা। কেননা গড় হিসেবে বিমান সংস্থাগুলো যেভাবে ভাড়া আদায় করছে তাতে প্রায় সব রুটেই ভাড়ার অঙ্ক থাকছে কাছাকাছি। ফলে দূরত্বের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-যশোর রুটের যাত্রীদের। বিভিন্ন বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট অনুযায়ী এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সৈয়দপুরসহ প্রায় সব রুটে এক পথের বিমান ভাড়া দেখানো হয়েছে গড়ে ৩ হাজার ৬শ’ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-যশোরের ক্ষেত্রেও চাওয়া হয়েছে একই ভাড়া। ঢাকা থেকে ১৪৬ অ্যারোনটিক্যাল মাইল দূরে থাকা সৈয়দপুরের ভাড়া ছিল ৩ হাজার ৬শ’ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। এই হিসেবে ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে প্রতি অ্যারোনটিক্যাল মাইলে যেখানে ভাড়া দাঁড়ায় ২৩ টাকা ৯৭ পয়সা সেখানে ঢাকা-বরিশাল রুটে আদায় করা হয় প্রতি অ্যারোনটিক্যাল মাইলে ৬৫ টাকা ৫৭ পয়সা।
বিমানের ভাড়া নির্ধারণে এই বৈষম্য বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এবং বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘বিমান চালুর শুরু থেকে এভাবে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অন্যায়ভাবে নেওয়া হয়েছে আমাদের কাছ থেকে। আশা করব বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’
বেবিচকের নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণের কথা এয়ারলাইন্সগুলো জানালেও এ রকম কোনো ভাড়া নির্ধারণের বিষয় অস্বীকার করেছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে আমরা এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের নির্ধারিত সর্বনিু ভাড়ায় যাত্রী নিতে বলি। সেটা ছিল মাথাপিছু ২ হাজার ৫শ টাকা। কোনো অবস্থায়ই সাড়ে ৩ হাজার নয়। ভাড়া নির্ধারণের এখতিয়ার বিমান সংস্থাগুলোর। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তারপরও যখন কথা উঠেছে আমি বিষয়টি দেখব। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলব।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘বিষয়টি আমারও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের মানুষ কেন অতিরিক্ত ভাড়া দেবে? বিষয়টি সম্পর্কে বেবিচক কর্তৃপক্ষকে লিখব আমরা। প্রয়োজনে বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করব।’