বিপদ সংকেতঃ মানসিক চাপে ১০ সর্বনাশ

:
: ৬ years ago

নাগরিক জীবন প্রতিনিয়ত আমাদের মানসিক চাপ নিয়ে তাড়া করে। এতে যে কাউকে যে কোনো সময়ে অসুস্থতার সঙ্গে আপস করতে হয়। এই মানসিক চাপটা প্রতিনিয়ত আমাদের কুরে কুরে খায়। অনেকেই এর সমাধান খোঁজেন। তবে এর বড় সমাধান নিজের ভেতর থেকেই বের করে নিতে হবে। ফলে মানসিকতার সঙ্গে শারীরিক নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এমনই ১০টি সমস্যা হাজির করা হলো আজ। টেক দ্য স্ট্রেস আউট অব ইউর লাইফ বইয়ের লেখক জে উইনার বলেন, ‘মানসিক চাপ শুধু মানসিক ক্ষতিই করে না। বরং আমরা আমাদের স্বাস্থ্য যতটা খারাপ হতে পারে বলে ভাবতে পারি তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

গবেষণার মানসিক চাপের সঙ্গে স্বাস্থ্যের নেতিবাচক সম্পর্ক পাওয়া গেছে। আমাদের জানা অনেক রোগেরই কারণ হতে পারে মানসিক চাপ। তাই মানসিক চাপের কারণে ডাক্তারের কাছে দৌড়ানোর আগেই জেনে নিন মানসিক চাপের প্রধান ১০ সমস্যা। এর কারণ জেনে নিজেই সচেতন হতে পারেন-

হৃদরোগ

বহুদিন থেকেই গবেষকরা বলছেন, মানসিক চাপের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায় আর হূৎস্পন্দনও। ঠিক কারণটা না জানা গেলেও এর মানসিক চাপ থেকে যুক্ত করা মুটিয়ে যাওয়া আর ধূমপান হৃদরোগের মারাত্মক অবনতি ঘটায় পরোক্ষভাবে।

ডাক্তাররা এও জানেন, হঠাৎ সৃষ্ট মানসিক চাপ থেকে ঘটতে পারে হূৎযন্ত্রতে আক্রমণ। তাই যাদের হৃদরোগ আছে তাদের মানসিক চাপ এড়ানোর উপায় খুঁজতে হবে। কিছু চাপ, যেগুলো এড়ানো সম্ভব নয়, তার সঙ্গে অবশ্য মানিয়েই নিতে হবে হৃদরোগীদের।

হাঁপানি

গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক চাপ হাঁপানি আরও বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় এও প্রমাণিত, পিতা-মাতার মানসিক চাপের কারণে হাঁপানি তাদের থেকে বাচ্চাদের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সন্তান গর্ভে থাকাকালে মানসিক চাপ, ধূমপান অথবা বায়ু দূষণের মতোই সন্তানের হাঁপানির কারণ হতে পারে।

মুটিয়ে যাওয়া

শরীরে জমে যাওয়া মেদ ঠেলে দেয় মারাত্মক সব স্বাস্থ্যগত সমস্যার দিকে। মানসিক চাপ থাকলে শরীরে কর্টেসল হরমোন বেড়ে যায়। আর এই বেড়ে যাওয়ার মাত্রা তলপেটে মেদ জমার কারণ হয়।

ডায়াবেটিস

মানসিক চাপ দু’ভাবে ডায়াবেটিসকে খারাপ দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রথমত, এ থেকে বাড়ে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো কাজগুলো। যেমন অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, মানসিক চাপে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের।

মাথা ধরা

মাথা ধরার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান মানসিক চাপ। শুধু সাধারণ টেনশনের জন্য সৃষ্ট মাথাব্যথা নয়; এমনকি মাইগ্রেনের কারণও মানসিক চাপ।

হতাশা আর দুশ্চিন্তা

এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে, মানসিক চাপ, হতাশা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। খুব অল্প বেতনে বেশি কাজ করতে হয়- এমন এক দল মানুষের যারা মানসিক চাপে থাকেন তাদের ওপর গবেষণায় করে দেখা গেছে, কয়েক বছরের মধ্যে তাদের তীব্র হতাশায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৮০ শতাংশ বেশি, যারা কাজের চাপে থাকেন না তাদের থেকে।

গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টিনালের সমস্যা

মানসিক চাপের কারণে আলসারের মতো ভয়ঙ্কর রোগ না হলেও এর কারণে আলসারের রোগীদের সমস্যাকে তীব্রতর করে। তবে গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টিনালের নানা সমস্যার কারণ ক্রনিক হার্টবার্ন থেকে শুরু করে বদহজম হতে পারে।

আলঝেইমার রোগ

গবেষণা অনুযায়ী মানসিক চাপ আলঝেইমার রোগকে ত্বরান্বিত করে। গবেষকদের মতে, বয়সকালে স্মৃতিভ্রমের রোগ আলঝেইমারের প্রভাব কমানোর আর অন্যতম প্রধান উপায় মানসিক চাপ থেকে মুক্তি।

দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া

বাস্তবিক কিছু গবেষণা এটা নিশ্চিত করে, মানসিক চাপে মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যায়। যেমন মা তাদের অসুস্থ শিশুদের দেখাশোনা করেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকেন অন্যদের তুলনায়। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, মানসিক চাপের কারণে ৯ থেকে ১৭ বছর বেশি দেখাতে পারে, যারা মানসিক চাপে থাকেন তাদের।

অকাল মৃত্যু

যারা নিয়মিত মানসিক চাপের মোকাবেলা করেন তাদের ওপর এক জরিপে দেখা গেছে, তাদের সমবয়সীদের থেকে তারা ৬০ শতাংশ বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, কেন মানসিক চাপ আমাদের এতটা অসুস্থ করে ফেলতে পারে? কেনইবা আমাদের মানসিক ধকল আমাদের শরীরকে সামলাতে হবে? মানসিক চাপ শুধু কোনো কোনো অনুভূতি নয়। কে উইনারের ধারণা মতে, মানসিক চাপ কেবল আমাদের মাথায় থাকে না। এটা আমাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক সংবেদন ও প্রতিক্রিয়া। যে কোনো ধরনের হুমকি বা চাপের মুখে যখন আমরা চাপে থাকি, তখন আমাদের শরীরও এর সঙ্গে তাল মেলায়। ফলে বেড়ে যায় হূৎস্পন্দন আর রক্তচাপ। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়তে থাকে। আমাদের রক্তে অ্যাড্রেনালিন আর কর্টেসল হরমোন বেড়ে যায়।