বিনা চিকিৎসায় তারা কি মারা যাবেন

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

অভাব আর নানা টানাপড়েনের মাঝেও হাতে হাত ধরে পার করেছেন বিবাহিত জীবনের ৩৩টি বছর। ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। লেপ-তোশক বানিয়ে এবং স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করে কোনোমতে চলত সংসার। অভাব-অনটন লেগে থাকলেও কখনও কাউকে বুঝতে দেননি। প্রতিবেশীরা বলতেন ‘সুখী পরিবার’। আর এই সুখী পরিবারেই কি-না শেষ বেলায় নেমে এলো অশুভ কাল মেঘের ছায়া!

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামের আবুল হাসান খন্দকার ও সেলিনা পারভিন দু’জনই ক্যান্সারে আক্রান্ত। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। একসঙ্গে পরিবারের দুই অভিভাবকের এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবরে ভেঙে পড়েছেন একমাত্র ছেলে গার্মেন্ট কর্মী তুহিন খন্দকার। আবুল হাসান জানান, বছরখানেক আগে কণ্ঠনালিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে তার। এক মাসের ব্যবধানে স্ত্রী সেলিনা পারভিনও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরপর জমিজমা বিক্রি করে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক ক্যান্সার হাসপাতাল এবং ডেল্টা হাসপাতালে সাধ্যমতো চিকিৎসা করান। চিকিৎসক বলেছিলেন, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দিতে হবে। চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দু’জনের চিকিৎসায় খরচ হবে ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ টাকা জোগাড় করাই অসম্ভব।

তাই টাকার অভাবে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন আবুল হাসান। বর্তমানে অর্থাভাবে ওষুধ খাওয়াও বন্ধ। চিকিৎসার জন্য অর্থসাহায্য চাইতে পারেন- এই ভয়ে স্বজনরাও খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও মেলেনি কোনো সহযোগিতা।

সেলিনা পারভিন বলেন, ‘সারারাত যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারি না। ছেলে বলেছে কিডনি বিক্রি করে আমাদের চিকিৎসা করাবে। কিন্তু আমি তো মা। ছেলেকে পঙ্গু বানিয়ে আমি কীভাবে বেঁচে থাকি! সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে আমরা স্বামী-স্ত্রী বেঁচে যেতাম।’

মুলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বকুল বলেন, একই সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল। পরিবারটির সামর্থ্য নেই চিকিৎসা করানোর। তাদের সহযোগিতায় সবাই হাত বাড়িয়ে দিতে পারি সামর্থ্য অনুযায়ী।

এদিকে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. স. ম. বায়েজিদুল ইসলাম জানান, ‘স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হবে। দেরি করলে রোগ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।’