বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নিতে ও পুরনো গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল দিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে ২০১৯-২০ সালের নতুন বাজেটে। আগামীকাল শনিবার অর্থ বিল অনুমোদনের সময় এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য গত সোমবার একটি ডিও লেটার(আধা সরকারি) অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দীপু। ডিও লেটারে তিনি লিখেছেন, দেশের ৯৩ ভাগ জনগোষ্ঠি বিদ্যুৎ সেবার আওতায় এসেছে। দেশে এখন ৩ কোটি ৩৪ লাখ বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের(আরইবি) গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ। আর এই গ্রাহকদের বেশিরভাগই দরিদ্র। দিন মজুর। এদের পক্ষে টিআইন করা কষ্টদায়ক ও অমানবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন বাধ্যতামূলকের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার। তবে এক্ষেত্রে সব ধরণের বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে টিআইএন জমাদান সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে না, শুধুমাত্র পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য তা বাদ দেয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীর দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ লোড হলে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের সনদ জমা দিতে হতো।

এদিকে, বাজেটে প্রস্তাবিত করখাতে কী পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যান বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরণের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা প্রস্তাব করা হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করা হয়েছে। এমনকি সংসদেও এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য বলা হয়েছে।

তাই সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত উৎসে কর প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে এখনো দু’টি চিন্ত রয়েছে। এর একটি হলো, বাজারে প্রচলিত সকল ধরণের সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে। অপরটি হলো, শুধুমাত্র পরিবার ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর তা প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্তের ভার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে রিটেইন আর্নিং ও রিজার্ভ ৫০ শতাংশের বেশি হলে ১৫ শতাংশ কর ধার্য করার কথা বলা হয়। একই সাথে বাজেটে স্টক ডিভিডেন্টের পরিবর্তে ক্যাশ বা নগদ ডিভিডেন্ট প্রদানকে উৎসাহিত করতে কোনো কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ট প্রদান করলে এ লভ্যাংশের উপর ১৫ শতাংশ করারোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তগুলো প্রত্যাহার করা হতে পারে।

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। নতুন ভ্যাট আইনে এবার অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাটের (এটিভি) পরিবর্তে ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি) বসানো হয়েছে। অর্থাৎ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হবে। এতে দেখা গেছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পণ্যে এ আগাম কর বসেছে। ভ্যাট রিটার্ন দিয়ে এই আগাম করের টাকা ফেরত নিতে হবে। এই টাকা ফেরত পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ব্যাংকের সুদ গুনতে হবে ওই ব্যবসায়ীকে। ফলে আমদানি পর্যায়ে এসব যন্ত্রপাতি ও পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট পাশের সময় তা পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আগামীকাল অর্থ বিল সংসদে পাস করার সময় এই পরিবর্তন গুলো করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন।