বিদায় ১৪২৪

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

‘অতীত নিশি গেছে চলে/ চিরবিদায় বার্তা বলে, কোন আঁধারের গভীর তলে/ রেখে স্মৃতিলেখা,/ এসো এসো এসো ওগো নবীন,/ চলে গেছে জীর্ণ মলিন-/ তুমি মৃত্যুবিহীন/ মুক্ত সীমারেখা।’ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ এমনভাবেই পুরনো পৃথিবীতে নতুন প্রত্যাশা আর সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। আজ সেই দিন পুরনোকে বিদায় জানানোর, সেই সঙ্গে নতুনকে স্বাগত জানানোরও। আজ শুক্রবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে কালের মহাতরঙ্গে মিলিয়ে যাবে একটি বছর। শনিবার সূর্যোদয় নব প্রত্যাশার ডানা মেলে ঝলমলিয়ে উঠবে নতুন বছরের আবেশে। আজ শুক্রবার, বঙ্গাব্দ ১৪২৪-এর ৩০ চৈত্র, বছরের শেষ দিন, চৈত্রসংক্রান্তি। আজ থেকে বাংলা পঞ্জিকা থেকে মহাকালের কৃষ্ণগহ্বরে চিরতরে হারিয়ে যাবে বঙ্গাব্দ ১৪২৪।

জ্যোতির্বিজ্ঞান-সংক্রান্ত প্রাচীন গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ থেকে নক্ষত্রমণ্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে বাংলা বর্ষপঞ্জির শেষ মাস চৈত্রের নাম রাখা হয় চিত্রা নক্ষত্রের নামে। শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে, বাংলা মাসের শেষ দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। গ্রীষ্ফ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে আকুল কৃষকরা চৈত্র মাসজুড়ে কামনা করে- বৃষ্টি নামুক। যাতে অসহনীয় পরিবেশ থেকে মানুষের মুক্তি ঘটে আর চাষাবাদের অনুকূল পরিস্থিতিও দেখা দেয়। সূর্য তার রুদ্ররূপে উপস্থিত হয় এ সময়। চৈত্রসংক্রান্তিতে নানা উপাচারের নৈবেদ্য দিয়ে তাকে তুষ্ট করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

বাংলাপিডিয়ায় চৈত্রসংক্রান্তির আচার বিষয়ে বলা হয়েছে, অতীতে চৈত্রসংক্রান্তি মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের অবস্থাপন্ন গৃহস্থরা নাতি-নাতনিসহ মেয়ে জামাইকে সমাদর করে নিয়ে আসত বাড়ি। গ্রীষ্ফ্মের দাবদাহেও আনন্দ-উৎসবের বন্যা বয়ে যেত। নগর সভ্যতার বিকাশে গ্রামবাংলার সেই আনন্দমুখর পরিবেশ হারিয়ে গেছে। তবে ইদানীং ভিন্ন আদলে শহরাঞ্চলেও চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব বা মেলা বসে।

চৈত্রসংক্রান্তিতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রস্তুতি নেয় পহেলা বৈশাখের হালখাতা উৎসবের। এ উৎসবে নিকোনো পরিচ্ছন্ন বিপণি অঙ্গন, ধূপ-ধুনোর সুগন্ধি আমোদিত করে রাখে ঘরকে। তা ছাড়া অতিথি এলেই গোলাপজল ছিটিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাকে। খরিদ্দারদের কাছ থেকে সারা বছরের বকেয়া টাকা তুলতে হালখাতা উৎসবের প্রস্তুতি হিসেবে চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপনের রেওয়াজ কত শত বছরের, তা গবেষণার বিষয়।

পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুনকে বরণ করে নিতে এখন দেশজুড়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন করছে চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণের নানা আয়োজন।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের আয়োজনে এবং শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে চৈত্রসংক্রান্তি ১৪২৪ উদযাপন করা হবে। অনুষ্ঠানমালায় থাকছে মুড়ি-মুড়কি বিতরণ, সরোদ বাদন, দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় গান, নৃত্য ও আবৃত্তি।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আজ সন্ধ্যায় বেঙ্গল বই-এর উঠানে সময় চেতনার গান পরিবেশন করবেন জলের গানের শিল্পীরা। জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় থাকছে শামা রহমানের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান।