বিজয় র‌্যালীর নামে বরিশালে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শিবির, নগরজুড়ে আতংক

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

অনলাইন ডেস্ক// বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকারকারী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বরিশাল নগরীতে। এই দলের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হওয়ায় দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। বেপরোয়া সন্ত্রাসবাদিতার কারনে দেশে-বিদেশে সমালোচিত এই সংগঠনটি নগরীতে দীর্ঘ দিন ঘাপটি মেরে থাকলেও বিজয় দিবসে প্রকাশ্যে আসায় আবারও আতংক ছড়িয়ে পরেছে গোটা নগরীতে। কিন্তু এই পুরো বিষয়টির কিছুই জানে না বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ।

একটি সূত্রে জানিয়েছে, প্রকাশ্যে শিবিরের শো-ডাউনের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ওই দিন আনুমানিক ভোরে বিএম কলেজ এলাকা থেকে শুরু করে নতুন বাজার পর্যন্ত কয়েক শ’ শিবির কর্মীর বিজয় দিবসের র‌্যালীর ব্যানারে শোডাউন করে। ব্যানারে উল্লেখ করে, ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো।’ যদিও এই শিবির স্বাধীনতার বিরোধীতা করে আসছে এবং স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও তারা মহান মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে নেয়নি। ওদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা ভিডিওতে শিবির উল্লেখ করেছে, ‘আলহামদুল্লিাহ, আবারও শিবির ধ্বনিতে প্রকম্পিত পুরো দেশ। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্নাঢ্য বিজয় র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্র শিবির বরিশাল মহানগরী।’

ভিডিওতে দেখা গেছে, শোডাউনটি নতুনবাজারস্থ স্বর্ণা জেনারেল স্টোর ও সিটি জেনারেল স্টোর্স-এর সামনে সমবেত শিবির কর্মীরা একটি সমাবেশ করে। সেখানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রিয় ছাত্র শিবিরের বির্তক বিষয়ক সম্পাদক কামরুল হাসান। সমাবেশের বক্তব্যে হ্যান্ড মাইকে ওই নেতা বলেন, ‘রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে আঘাত হানলে প্রয়োজনে রক্তের নদী বইয়ে দিয়ে সেই স্বাধীনতা রক্ষা করবো।‘

শোডাউনের সামনে বেশ কয়েকজন শিশুদের বিজয় দিবসের লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড বহন করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, এই সংবাদ অত্যান্ত উদ্বেগের। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তাদের বিজয় দিবস পালনের শোডাউন করাটার পেছনে ভিন্ন কোন ইঙ্গিত বহন করছে। আমি সরকার ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রাখবো, বিষয়টি যেন গুরুত্বসহকারে দেখে এবং যারা শোডাউন করেছে সেই শিবির কর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলার সভাপতি এ্যাড. এ.কে আজাদ মনে করেন, বাংলাদেশে জামায়াত বা তার অঙ্গ সংগঠনের বিজয় দিবসের র‌্যালী করার কোন অধিকার নেই। শুধু জামায়াত কেন সাম্প্রদায়িক কোন গোষ্ঠিরই বিজয় দিবসে কোন কর্মসূচি পালনের অধিকার নেই। কেননা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিজয় দিবসে শিবিরের র‌্যালী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র। জনগনের কাছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হালকা করার জন্য শিবির এই পথ বেছে নিয়েছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবী জানিয়ে আজাদ আরও বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত।

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর আ.লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. সৈয়দ গোলাম মাসউদ বাবলু বলেন, বিজয় দিবসে র‌্যালী করার মাধ্যমে শিবির প্রকারন্তরে দিবসটিকে অবমাননা করল। ঘাপটি মেরে থাকা যুদ্ধাপরাধীদের এই সংগঠন প্রমাণ করে দিল তারা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। যা আমাদের জন্য একটি অশনি সংকেত। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে সকলের অনুধাবন করা উচিত।

শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পুলক চ্যাটার্জী বলেন, ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি বরিশালের পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। সে কারনে দেশ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পান না। শিবিরের বিজয় র‌্যালী প্রসঙ্গে আরও বলেন, র‌্যালীটি হয়তো দু-একদিনে পরিকল্পনায় করেছে। কিন্তু নগরীতে জামায়াত শিবিরের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে সেখানে কি শেখানো হয় তা দেখছে না পুলিশ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকা কোথায় যায় তা খতিয়ে দেখছ না। পুলিশের এই নিবরতায় স্বাধীনতার বিরোধী শত্রুরা সংঘটিত হচ্ছে। এর খেসারত আমাদেরই দিতে হবে।

পুলক চ্যাটার্জী মনে করেন, আর কাল ক্ষেপন না করে পুলিশের উচিত শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা।

বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী মজুমদার বলেন, নির্বাচনের আগে শিবিরের সংগঠিত এই র‌্যালী আসলেই উদ্বেগের কারন। র‌্যালীটি যদি পুলিশ-প্রশাসনের অজ্ঞাতসারে করে থাকে তাহলে বলব, প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমি মনে করি অতি দ্রুত শিবির কর্মীদের সনাক্ত করা উচিত।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম জানান, ছাত্র শিবির নগরীতে র‌্যালী করেছে সে সম্পর্কে আসলে স্পষ্ট করে কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরাও লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু কোথায় ও কারা করেছে তা জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (অতি: আইজিপি) মো: মোশারেফ হোসেন বলেন, আমরা শিবিরের র‌্যালীর বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। শিবির সংগঠিত হচ্ছে এমন তথ্য অমূলক। এতে ভয়ের কিছু নেই। বরিশাল পুলিশ তৎপর রয়েছে। শিবির কোন ক্ষতি করতে পারবে না বলে আশ্বাস প্রদান করেন পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, বগুড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে শিবিরের সমাবেশস্থলের দুরত্ব ছিল মাত্র দেড়শ গজ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ীরা।

জাতীয়প্রচ্ছদবরিশাল এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কমলাপুর রেলস্টেশনের ঘাস নিয়ে লাইভ করার পর এবার ট্রেনে ওঠার সময় নারী ও বৃদ্ধাদের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফের ফেসবুক লাইভ করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে যারা রেলে চলাফেরা করেন তাদের প্রতি কি একটু সহায় হবেন- এমন আহ্বান জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি বউ-বাচ্চা, বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চান তা হলে বউ থাকবে কই আর মা-বাবা থাকবে কই। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। লাইভে এসে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে ওঠার সিঁড়ির দূরত্ব দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘এই ট্রেনটাকে মিটার গেজ (পরে সংশোধন করে বলেন ব্রডগেজ) বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো-প্ল্যাটফ্রম থেকে দূরত্ব বা উচ্চতা কত? ব্রিটিশ আমলের ট্রেনগুলো ছিল এমন। আপনারা (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) নতুন ট্রেন আনলেন কিন্তু প্ল্যাটফর্ম এখনো পুরনো।’ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত লোকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন সবাই, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা দোতলার সমান। কোনো স্টেশনে ট্রেনটি তিন মিনিট থামে। তিন মিনিটে ৫০ জন মানুষ প্রায় দুই তলার সমান উচ্চতায় ওঠা কি সম্ভব?’ রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলমন্ত্রী, ট্রেন আপনি অনেক উঁচু বানিয়ে দিছেন। আর প্ল্যাটফর্ম এখানে বিট্রিশ আমলের। আমি কমলাপুর সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলছি। আর গ্রামের স্টেশনগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। সেখানে ট্রেনে উঠতে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বউ বাচ্চা নিয়ে ওঠা একটা বে-ইজ্জতের কারবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুনিয়া এগোচ্ছে, সব কিছু এগোচ্ছে। রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে ব্রেইনে আনেন পরিবর্তন করার। আপনারা বউ-বাচ্চা লইয়া ট্রেনে যাতায়াত করবেন কি-না জানি না। তবে, এই প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের সমান করতে কোটি কোটি টাকার দরকার পড়বে না। আশা করি রেলমন্ত্রীসহ সকলেই এর প্রতি সদয় হবেন।’ এর আগে (৩০ মে) ব্যারিস্টার সুমন স্টেশনের সামনে রেললাইনের ওপর বেড়ে ওঠা ঘাস কেটে পরিচ্ছন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে তার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভ দেন। এর পরদিনই (শুক্রবার) সেসব ঘাস কেটে পরিষ্কার করে ফেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেখানে তিনি দেখেন, রেললাইনের ওপর বড় বড় ঘাস জন্মেছে। যা কাটার জন্য কারো সময় নেই। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলের সময় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মোটামুটি ভালোই চলতেছে। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’ ওই লাইভে তিনি আরও বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। এটা কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন। এ সময় তিনি এক হাত লম্বা লম্বা ঘাস দেখিয়ে বলেন, ‘কিছু লোক লাগিয়ে ঘাসগুলো পরিষ্কার করলে স্টেশনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত।’
৬ years ago