প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য। এতে বিচারপতি নিয়োগের কাজটি আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর হবে এবং জনগণের মধ্যে নিয়োগের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণা দূরীভূত হবে।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া বিদায়ী সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রের তিনটি (আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ) অঙ্গের দায়িত্ব এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে বিধৃত রয়েছে। তিনটি অঙ্গের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই গণতন্ত্রকে বিকশিত করে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এটা আমাদের সংবিধানের সৌন্দর্য।
তিনি বলেন, একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। এটা হলো বিচারকদের সততা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি গণমানুষের অবিচল বিশ্বাস। সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উঁচু নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, তেমনই সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এটা অর্জন সম্ভব কেবলমাত্র নিয়মিত অধ্যয়ন ও সময়মতো আইনানুগভাবে বিচারিক কাজ সম্পন্নকরণের মাধ্যমে।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, মামলার সংখ্যা বিবেচনায় আমাদের বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। মামলার জট নিরসনে দেশের অধস্তন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচারকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। জেনে খুশি হয়েছি যে, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ শুরু করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে আয়োজিত জনাকীর্ণ এ সংবর্ধনায় উভয় বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতাসহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনার প্রদত্ত বিভিন্ন রায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আপনার রায়ের গাইডলাইন কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুরক্ষাবর্ম হিসেবে কাজ করছে। নারীর নিরাপদ পরিবেশে কাজ করার এবং শিক্ষাগ্রহণের পথকে সুগম করছে, যা সুদূরপ্রসারীভাবে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীশিক্ষার বিস্তারে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও ফতোয়ার নামে গ্রামের নিরীহ মানুষকে হয়রানি এবং তাদের মানবাধিকার লংঘন করে কতিপয় শাস্তি প্রদানের যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছিল, আপনার রায়ে এসব বিচারবহির্ভূত কার্যকলাপকে আপনি অবৈধ ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে এ ধরনের শাস্তি প্রদানকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা যাবে বলে রায় দিয়েছেন। আপনার সে রায়ের মাধ্যমে গ্রামের নিরীহ মানুষের বিশেষত নারীর প্রতি সহিংসতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, বিচার ও অধিকারহীনতা মানুষের জীবনকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে। ন্যায়বিচার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আপনার নিরন্তর লড়াই বিচার বিভাগকে দেখিয়েছে নতুন আলো।
শেষ কর্মদিবসে প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। তবে বারের পক্ষে সম্পাদকের দেওয়ার কথা থাকলেও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে বারের পক্ষে সহ-সভাপতি শফিক উল্লাহ সংবর্ধনা দেন।