বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতার মা-বাবা, কেঁদে চলেছে ১৪ মাসের আয়রা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ভারতে তুমুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছেই। এ বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খেতে থাকা দেশটির পুলিশ নির্বিচারে গ্রেফতার করছে প্রতিবাদী জনতাকে। ধরপাকড় থেকে রেহাই পাননি ১৪ মাস বয়সী এক শিশুর মা-বাবাও। গত ১৯ ডিসেম্বর একতা শেখর ও রবি শেখর নামে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সপ্তাহ পেরোলেও মুক্তি দেয়ার কোনো লক্ষণ নেই। অন্যদিকে কেঁদে কেঁদে মা-বাবাকে ডেকে চলেছে তাদের সন্তান আয়রা।

একতা ও রবি দম্পতিকে সপ্তাহ ধরে কারাবন্দি রাখার বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। ১৪ মাসের সন্তানের কথা বিবেচনায় নিয়ে হলেও এ দম্পতিকে মুক্তি দেয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন পরিসরে।

সংবাদমাধ্যম জানায়, বিতর্কিত আইনটি পাসের পর উত্তর প্রদেশের বারানসীতে বিক্ষোভ ডাকে বামপন্থি বিভিন্ন সংগঠন। ওই বিক্ষোভে যোগ দেন বায়ু-দূষণ রোধে কাজ করা এনজিও ক্লাইমেট এজেন্ডার দুই পরিচালক একতা ও শেখর।

বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সেখানে আক্রমণ করে এবং অনেকের সঙ্গে ওই দম্পতিকেও ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তাদের ১৪ মাস বয়সী কন্যা আয়রাকে দেখছেন আত্মীয়রা। তারা বলছেন, আয়রার কথা চিন্তা করে হলেও এখন একতা-রবিকে মুক্তি দেয়ার বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনা করা উচিত। স্বজনরা আইনি লড়াইয়ের কথাও বলছেন।

রবি শেখরের মা শীলা তিওয়ারি তার সন্তানকে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে কেন পুলিশ তাকে ধরলো? সে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিল। কর্তা ব্যক্তিরা কি ভাবতে পারেন, তাদের এই ছোট্ট শিশু কীভাবে মাকে ছাড়া থাকছে? এটাই কি অপরাধ দমনের উপায়?’

মা-বাবাকে দীর্ঘদিন না দেখে আয়রা খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে জানিয়ে তার দাদী শীলা বলেন, ‘ও খাবার মুখেই তুলছে না। অনেক কষ্টে তার মুখে কয়েক চামচ খাবার দিয়েছি। ‘আম্মা আও, পাপা আও (আম্মা এসো, বাবা এসো) বলে সে সারাক্ষণ শুধু মা-বাবাকে ডাকছে। মা-বাবা আসছে বললেও সে থামছে না। কী করবো বুঝতে পারছি না।’

১৪ মাসের আয়রা এখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, আর মা-বাবাকে ডাকছে

পুলিশ দাবি করছে, শহরে জড়ো হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেদিন ওই দম্পতি তা অমান্য করেই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বিধায় তাদের ধরা হয়েছে।

সেদিন বারানসীর আরেক এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জের কারণে সংঘাত শুরু হলে এতে পদদলিত হয়ে ৮ বছর বয়সী এক শিশু মারা যায়।

শহরজুড়ে বিক্ষোভের কারণে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডজনখানেক শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ ৬০ জনেরও বেশি মানুষ গ্রেফতার হন। পুলিশ ওই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাঁধানোর মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছে।

নরেন্দ্র মোদির সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করলে প্রথমেই এর বিরুদ্ধে আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়সহ দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমেই দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটকসহ গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে পুলিশ। এতে কেবল উত্তর প্রদেশেই প্রাণ হারিয়েছে ২১ জন, যাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে বুলেটের আঘাতে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ‘নির্যাতিত’ হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার এ আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের পরিপন্থী।