বিএসএফআইসি’র নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত

:
: ৬ years ago

>> ফল প্রকাশ ও ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি

চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের তিনটি পদের নিয়োগ পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে। ওই নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী মো. ইয়াদনান রফিক রসি।

তিনি জানান, নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিতের পাশাপাশি ওই নিয়োগ বাতিল কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত। তিন পদের জন্য অনুষ্ঠিত (লিখিত ও ভাইবা) পরীক্ষার ফলাফল কেন প্রকাশ করা হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

অপর এক রুলে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার কারণে তারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সেই ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প সচিব, চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের পাঁচ পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ফারুকের (এম ফারুক) সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. ইয়াদনান রফিক রসি, মিয়া মো. ইশতিয়াক ও হিন্দোল নন্দী।

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, আমার জানা মতে এই প্রথম কোনো মামলায় চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এটা জনস্বার্থে আদালতের পক্ষ থেকে একটি ভালো আদেশ।

প্রসঙ্গত নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর তিনটি পদে নিয়োগ বাতিল করে ‘চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন’। নিয়োগ বাতিল হওয়া পদগুলো হলো- সহকারী ব্যবস্থাপক (উৎপাদন), সহকারী ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ/বীজপরিদর্শন) এবং সহকারী ব্যবস্থাপক। তিনটা ক্যাটাগরিতে ৬৯টি পদের বিজ্ঞপ্তি ছিল।

গত ২৮ মার্চ কর্পোরেশনের চিফ অব পার্সোনেল মো. আবুল রফিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ বাতিলের খবর জানানো হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিয়োগপ্রার্থীরা। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিলের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন ৩৩ প্রার্থী।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর ১০টি পদে প্রথম শ্রেণির ১০৭টি শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা এবং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১০টি পদের মধ্যে প্রথম সাতটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০১৫ সালেই সম্পন্ন হয়। তবে বাকি তিনটি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ওই তিনটি পদের ৬৯টি প্রথম শ্রেণির নিয়োগের ফলাফল ঝুলে আছে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে।

চাকরিপ্রার্থীরা জানান, নিয়োগপ্রার্থীদের দাবির মুখে দফায় দফায় ফলাফল প্রকাশের তারিখ দেয়া হলেও তা প্রকাশ করেননি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৫ মার্চ চিনি শিল্প ভবন ঘেরাও এবং অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন নিয়োগপ্রার্থীরা।

পরিস্থিতি শান্ত করতে কর্পোরশেনের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জানানো হয়, ২০ মার্চের মধ্যে নিয়োগ সম্পর্কিত সব কার্যক্রম শেষ করা হবে। কিন্তু এরপরও নির্ধারিত দিন ফলাফল প্রকাশ করেনি কর্পোরেশন।

এ সময় দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পোস্টারিং করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির বয়স শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিয়োগপ্রার্থীদের অনেকে। চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা ও ভাইবা অনুষ্ঠিত হলেও এর মধ্যে ফলাফল ঘোষণা না করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। এরপর চাকরিপ্রার্থীরা রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিজ্ঞপ্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন।