‘বিউটিকে ধর্ষণ করেছে বাবুল, হত্যায় ময়না মিয়া’

:
: ৬ years ago

হবিগঞ্জে আলোচিত বিউটি আক্তারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ময়না মিয়া নামে ওই কিশোরীর ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড কিভাবে ঘটেছে এবং আর কারা কারা জড়িত সে বিষয়ে লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক তৌহিদুল ইসলামের কাছে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ময়না মিয়া।

স্বীকারোক্তিতে ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডে গা শিউরে ওঠার মত বর্ণনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অপারগ হবিগঞ্জ আদালতের একটি বিশ্বস্ত সূত্র। এদিকে পুলিশও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ।

এদিকে এ ঘটনায় একই আদালতে মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়া ধর্ষণের কথা স্বীকার করে  জবানবন্দি দিয়েছে।

পুলিশ জানায়, জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে গত ২১ জানুয়ারি ধর্ষণ করে একই গ্রামের ইউপি মেম্বার কলম চান বিবির ছেলে বাবুল মিয়া। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সায়েদ আলী। মামলায় সাক্ষি করা হয় সায়েদ আলীর ঘনিষ্ট আত্মীয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই বিউটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে নানার বাড়িতে। ১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকে নিখোঁজ হয় সে। পরদিন ১৭ মার্চ গুনিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৮ মার্চ কিশোরীর বাবা সায়েদ আলী বাদি হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে দেশ। এরপর পুলিশও হত্যার মোটিভ উদঘাটনে মরিয়া হয়ে উঠে। প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।

দ্বিতীয় দফায় চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাঝেই তিনি মোটিভ উদঘাটনে সক্ষম হন। বাবুল ও তার মা কলম চান বিবিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিউটির বাবা, মা, মামা, নানীসহ নিকটাত্মীয়দের।

অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষি ময়না মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে হত্যার মোটিভ। শেষ পর্যন্ত ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। প্রকাশ করে জড়িত অন্যান্যদের নামও। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেলে তাকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে হত্যাকাণ্ডে  সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

এরপর রাতেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিউটির নানী ফাতেমা বেগম সাক্ষি হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় গ্রেফতারকৃত বাবুল মিয়া। সে প্রথম দফায় বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও আদালতকে জানিয়েছে।

অপরদিকে বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে ২ দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার রাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।