মাঝে পেঁয়াজের দাম পড়তির দিকে যাওয়ায় সরকারি বিপণন সংস্থা সংস্থার (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাকের পেছনে ক্রেতাদের লাইন ছিল না বললেই চলে। বলতে গেলে ট্রাকের বিক্রেতাদের অলস বসে থাকতে দেখা যেত নগরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে। আর এক কেজির স্থলে অনেকে ৮-১০ কেজি করেও পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পেতেন। কিন্তু পেঁয়াজের মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় সেই দৃশ্যপট হঠাৎই বদলে গেছে। গত কয়েক দিন ধরে ভ্রাম্যমাণ পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাকের পেছনে সকাল থেকেই ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে।
টিসিবির বরিশাল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে পাঁচটি ট্রাকে প্রতিদিন পাঁচ মেট্রিক টন করে পেঁয়াজ নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হতো। দাম পড়ে যাওয়ার পর সরবরাহ কমিয়ে ছয়টি ট্রাকে তিন মেট্রিক টন করে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ট্রাকের সংখ্যা বাড়িয়ে সাতটি করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রাকে এক মেট্রিক টন (এক হাজার কেজি) করে পেঁয়াজ সরবরাহ করা হচ্ছে। আর ক্রেতাদের চাহিদাও এখন অনেক। ৩৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কেনার জন্য দীর্ঘ লাইন থাকছে প্রতিটি ট্রাকের পেছনে।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম গত তিন দিন ধরে বেড়ে ২০০ টাকায় উঠেছে। গত কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় পেঁয়াজসহ বিভিন্ন রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাতে দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
আজ সোমবার নগরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। অথচ গত বৃষ্টির আগে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বাজারে তার মূল্য ছিল ১৩০ টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, তাঁরা বেশি দামে কিনে শতকরা ১০ টাকা লাভে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
অপরদিকে পাইকারি বাজারের বিক্রেতাদের দাবি, গত কয়েক দিনের বৈরী আবহাওয়ায় মোকামে পেঁয়াজ না থাকায় সেখানেই দাম বাড়ানো হয়েছে। উপরন্তু অসময়ের বৃষ্টিপাতে কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজও তুলতে পারছেন না। ফলে মাঠে প্রচুর পেঁয়াজ যেমন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, তেমনি মোকামে পেঁয়াজের আমদানিও কমছে। ফলে দাম বাড়াচ্ছে মোকামের ব্যবসায়ীরা। আর এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
ক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আবার তাঁরা টিসিবির পেঁয়াজ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তা ছাড়া টিসিবির বর্তমান পেঁয়াজের মানও আগের চেয়ে ভালো।
গত এক মাসে টিসিবি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৮টি জেলায় প্রায় ২০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বিক্রি করেছে। প্রথমে ৪৫ টাকা ও পরে ৩৫ টাকা কেজি দরে এসব পেঁয়াজ নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে স্বস্তি আনে। হেনারা বেগম নামে নগরের দক্ষিণ আরেকান্দা এলাকার এক নারী বলেন, ‘সকাল থেকেই অনেক ক্রেতার ভিড়। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি। এতেই খুশি।’
টিসিবি সূত্র বলছে, দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পর গত ২০ নভেম্বর থেকে বরিশাল নগরে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি। তবে ওই সময় মাত্র ১০ মেট্রিক টন পেঁয়াজের বরাদ্দ পাওয়ায় তা দুই দিনেই বিক্রি হয়ে যায়। এরপর গত ১ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় নগরের পাঁচটি স্থানে পাঁচটি ট্রাকের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে টিসিবি। এরপর পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হলে দাম কমিয়ে ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত রাখে টিসিবি।
জানতে চাইলে টিসিবির বরিশাল কার্যালয়ের প্রধান মো. আনিসুর রহমান বলেন, টিসিবির পেঁয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ায় নগরে এত দিন ছয়টি ট্রাকে ৩ টন করেও পেঁয়াজ বিক্রি করা হতো। এখন বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় টিসিবির পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে।
– প্রথম আলো