বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শা‌য়িত মেয়র রিফাত

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

সবাইকে কাঁদিয়ে চিরঘুমে শায়িত হলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র আরফানুল হক রিফাত। প্রিয় নগরপিতাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ কুমিল্লা নগরবাসী।

 

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ৩ টার দিকে লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নগরীর টমছমব্রিজ কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয় মেয়র রিফাতকে।

দ২০২২ সালের কুসিক নির্বাচনে প্রথমবার মেয়র পদে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। মাত্র ১৬ মাসের মাথায় এই মানুষটিকে হারিয়ে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করছে নগরবাসী।

 

দাফন শেষে দোয়া করেন রিফাতের একমাত্র পুত্র এহতেশামুল হক। জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপিসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নেন।

জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন রিফাতের একমাত্র ছেলে এহতেশামুল হক। এরপর কফিন নেওয়া হয় নগরীর টছমব্রিজ কবরস্থানে।

 

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টায় আরফানুল হক রিফাতের মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে কুমিল্লা তার নিজ ভবনে আনা হয়, পরে শুক্রবার সকাল ৯ টায় সিটি কপোর্রেশন প্রাঙ্গনে নেওয়া হলে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়, পরে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সামনে রাখা হয়।

সেখানে ঢল নামে শোকার্ত মানুষের। শোক ও সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন নগরের হাজার হাজার বাসিন্দা, পরে বাদ জুম্মা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ইদগাহ মাঠে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন জানাজায়। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতা থাকা সত্ত্বেও রিফাতের শ্রদ্ধা জানাতে জানাজায় হাজির হয়েছিলেন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনীতি দলের নেতারাও।

জানাজায় উপস্থিত থেকে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আরফানুল হক রিফাতের স্বপ্ন ছিলো কুমিল্লাকে আরো সমৃদ্ধশালী কুমিল্লা হিসেবে গড়ে তুলবেন। তিনি একজন নিঃস্বার্থ ও নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি আমাদের মধ্যে আজ না থাকলেও আমরা তার জন্য দোয়া করবো। তিনি তার সারাটি জীবন কুমিল্লাবাসীর স্বার্থে কাজ করে গেছেন। সবার কাছে অনুরোধ করবো, সবাই যেন তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

 

আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, রিফাতকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো আমার। সেই ছোটবেলা থেকেই সে তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলো। তাকে যত দায়িত্ব দিয়েছি সে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করেছিলো। তার হাত পায়ের রগ কেটে দেওয়ার পরেও সে থেমে থাকেনি। সাহসিকতার সাথে সে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলো। কুমিল্লাকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিলো। সেগুলো পূরণ করার আগেই আল্লাহ তাকে নিয়ে চলে গেলো। আল্লাহ রিফাতকে বেহেশত নসিব করুন এটাই দোয়া করবো সবসময়।

এসময় জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসির, এসকিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এ জেড এম শফিউদ্দিন শামিম, সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা ৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজি মো. ফখরুল, দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক এয়ার আহমেদ সেলিম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবদুল মইন, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান জামাল নাছের, লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়া ও দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

 

প্রসঙ্গত, গত বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মেয়র রিফাত।কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।