বাবা কাঁদলেন এবং অনেককে কাঁদালেন!

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

‘মেয়ে আমার দুইবার এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত চলে আসছিল। টাকার লোভে মেয়েকে বুঝিয়ে আবার সৌদি পাঠিয়ে দেই। এমন হবে জানলে কি আর পাঠাতাম!’ বাবা বলছেন, আর তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে!

মেয়েটির বয়স খুব বেশি হলে ১৬/১৭ হবে। কিন্তু তাকে পাসপোর্টে দেখানো হয়েছে, ৯১ সালে জন্ম! তার চেহারায় যে নিষ্পাপতা আছে, সেই অনুযায়ী আদর যত্ন পেলে আরো মায়াবী হয়ে ওঠতো নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার পরিবর্তে সে এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ফেরত এসেছে!

সৌদি থেকে সে ঢাকা এয়ারপোর্টে এসে নামে। নামার পর আর চিনে না। কথা বলছেন বেঠিক। আমাদের পুলিশ সদস্য বিষয়টা লক্ষ্য করেছে। তারপর তার কাছে জানতে চায়, কোথায় যাবে?

সে তখন সঠিকভাবে বলতে পারে না এবং আবোল-তাবোল বলছে। আমাদের কাজ আইনশৃঙ্খলা দেখা, স্মাগলিং ও হিউম্যান ট্রাফিকিং কন্ট্রোল করা। কিন্তু তাই বলে কি মানবিকতা থাকবে না?

প্রতিদিনই আমরা মানবিকতার অনেক কাজ করে থাকি।

একশ ভাগ চেষ্টা ভাল কিছু দেবার। এই প্রত্যয়ই আমাদের নিরন্তর। অফিসে আনা হয় তাকে। আমাদের লেডি পুলিশ সদস্য তাকে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করে উদঘাটন করা চেষ্টা করে কি হয়েছে? এর আগে মানসিক ভারসাম্যহীনভাবে এতটা খারাপ কাউকে পাইনি। চরম নির্যাতিত পেয়েছি।

এবার পেলাম নিষ্পাপ মুখটির উপর উপর্যুপরি নির্যাতনের করুণ ছাপচিত্র! যে কি না তার পৃথিবীর রূপ দেখার আগেই কিছু অসভ্য জানোয়ারের রূপ দেখেছে। ছোবলে ছোবলে সে দেখেছে, এই তো হিংস্রের ছোবল! নরমাংসে আচড় খেতে খেতে সে শিখেছে, পৃথিবীর রূপ তার নয়! সে যেন এক যাঁতাকল!

এর আগে আমরা সৌদি থেকে ফেরত আসা একজন মেয়েকে পেয়েছি, যার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। এ রক্ত নাকি বহুদিন ধরে বন্ধ হচ্ছে না। তাকে সেখানে কোন চিকিৎসাও দেয়া হতো না। তাকে হাসপাতালে পাঠালে হাসপাতালও ভর্তি করাতে চায়নি। বলেছিল, ক্রাইম ম্যাটার, এভাবে নেয়া যাবে না। আমরা বুঝিয়েছি, বিদেশ ফেরত, চিকিৎসা দিন।

এসব নির্যাতিতের চেহারা দেখে দেখে আমরা অনেক কিছু জেনে গেছি। ওইদিন একজন বলতে ছিলেন, বাপ-বেটা মিলে ধর্ষণ করলে রক্ততো ঝরবেই! (আমি সরি, এভাবে লেখার জন্য! ধর্মের লেবাসের বাইরে মানুষ যে কতোটা জানোয়ার হতে পারে, তার কিছুটা কি জানা উচিৎ না?

এসব বিষয় আসলে আমাদের অনেকগুলো কাজ করতে হয়। পাসপোর্টে ঠিকানা দেখে তার এলাকার থানায় খবর দেয়া হয়। ওই এলাকার ওসিকে ঠিকানা দেয়া হয়। সে ঠিকানা অনুযায়ী মেয়েটির বাড়ী যাওয়া হয়। তার বাবাকে খবর দেয়া হয়। মেয়েটির বাবার সাথে কথা বলে তাকে আসতে বলা হয়।

সারাদিন পর রাতে তার বাবা আসেন। তার কাছ থেকে আরো কিছু জানা হয়। বাবা বলেন, দুইমাস তার সাথে যোগাযোগ ছিল, তারপর আর যোগাযোগ করতে পারেনি। মেয়েকে নিয়ে বাড়ী যাবেন, সেই টাকাও নেই। আমরা গাড়ীটিও ব্যবস্থা করে দেই। এভাবে আমরা শান্তি পাই। এতোটুকু নিশ্চিত হই, বাবার সাথে মেয়েটি ফিরে যাচ্ছে বাড়ী।

(তার একটি ভিডিও আমাদের কাছে আছে, যা শুনলে আপনারও খুব খারাপ লাগবে। )

 

লেখক: অ্যাডিশনাল এসপি, বিসিএস (পুলিশ)
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)