‘বাবা আমার পা কে কেটে দিয়েছে?’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

‘মা আমি কি আর আগের মত হাঁটতে পারব না? আমার একটি পা নাই কেন? বাবা আমার পা কে কেটে দিয়েছে? আমার লাল জামাটা কই?

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই একের পর এক প্রশ্ন করছিল আর কাঁদছিল শিশু সুমাইয়া আক্তার মেঘলা।

রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার সাড়ে ৩ বছরের এই শিশুটি রোববার রাতে মাহিগঞ্জ কলেজ রোডে ট্রাকের চাপায় ডান পা হারিয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান। থাকেন মাহিগঞ্জ কসাইটুলিতে। এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সুমাইয়াই বড়।

রফিকুল ইসলাম বলেন, রোরবার রাতে মা কাজলি বেগমের সাথে বাজারে লাল জামা কিনতে যায় সুমাইয়া। এরপর কলেজ রোডের চাতালে এসে জামাটি আমাকে দেখায়। এসময় আমি তাকে বাড়ি যেতে বলি।

তিনি বলেন, পরে সে চাতাল থেকে রংপুর-সুন্দরগঞ্জ সড়কে ওঠামাত্র একটি বেপরোয়ারা ইটবোঝাই ট্রাক সুমাইয়ার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে আমার মেয়ের পা থেঁতলে রাস্তার সঙ্গে মিশে যায়। পরে দ্রুত তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে আসার পর সোমবার সুমাইয়ার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। চিকিৎসায় আরও কত টাকা লাগবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

এ সময় তিনি মেয়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দোষী ট্রাক চালকের ফাঁসি দাবি করেন।

সুমাইয়ার মা কাজলি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েটা পঙ্গু হয়ে গেল। ট্রাকটি আমার মেয়েকে পঙ্গু বানিয়ে দিল। আমি এর বিচার চাই,  চালকের শাস্তি চাই।

তিনি বলেন, মেয়েটি বাব বার আমাকে বলছে, ‘মা আমি কি আর হাঁটতে পারব না। আমার পা কে কেটে দিয়েছে।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. অজয় কুমার রায় বলেন, সুমাইয়ার ডান পা ট্রাকের চাপায় থেঁতলে গিয়েছিল। তাই  পা’টি হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে। শিশুটি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। তার চিকিৎসায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।

মাহিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে। চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।