অবশেষে বরিশালের বানারীপাড়ায় যৌতুকের দাবীতে তিন বছরের শিশু সন্তানের সামনে স্ত্রীর পায়ের রগ কাটা মামলার আসামী রাসেল বালীকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৮ নভেম্বর রবিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে ওসি মো. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
৯ নভেম্বর সোমবার সকালে তাকে বরিশালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বর্বরোচিত এ ঘটনার এক মাস ৫ দিন পরে পুলিশ ধূর্ত রাসেল বালীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে বানারীপাড়া পৌর শহরের ৬ নং ওয়ার্ডে দুলাল বালীর বাসার সামনের রাস্তায় শিশু সন্তানের সামনে গৃহবধূ হ্যাপীর পায়ের রগ কেটে দেন স্বামী রাসেল বালী।
এ বর্বরতায় রাসেলকে তার পিতা হাসান বালী সহায়তা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় গৃহবধূ হ্যাপীকে প্রথমে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়।
এ ঘটনায় ৪ অক্টোবর রবিবার রাতে আহত ওই গৃহবধূ হ্যাপীর পিতা আঃ রাজ্জাক হাওলাদার বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় ওই গৃহবধূর স্বামী রাসেল (৩২) শ্বশুর হাসান বালী (৬৫),শাশুড়ি খাদিজা বেগম(৫৫) ও চাচাতো দেবর জসিমকে (৩০) আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এদের মধ্যে মামলা দায়েরের পরে ওই দিন গভীর রাতে সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার গ্রামের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামী জসিমকে (৩০) গ্রেফতার করে। ৫ অক্টোবর দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের হাওড়াবাড়ি এলাকার হাসান বালীর ছেলে ধান ব্যবসায়ী রাসেল’র সঙ্গে একই এলাকার আ. রাজ্জাক হাওলাদারের মেয়ে হ্যাপীর ১০ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
তাদের সংসারে রিমি (৯) ও রাতুল ( ৩) নামের দু’টি সন্তান রয়েছে। আহত হ্যাপীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে তিন লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে হ্যাপীকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলেন রাসেল। স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মেটাতে হ্যাপী তার স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে ৩৬ হাজার টাকা দিলেও বাকী টাকার জন্য তার ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। হ্যাপী জরায়ু সমস্যার কারণে চিকিৎসা করানোর জন্য স্বামী রাসেলকে বার বার অনুরোধ করার পরে ২ অক্টোবর শুক্রবার তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে শুধু আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই দিন রাতে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হ্যাপী উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বামীকে অনুরোধ করার পরেও তিনি চিকিৎসা করাতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে চিকিৎসা করাতে বলায় এ নিয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। ৩ অক্টোবর শনিবার সকালে অসুস্থ হ্যাপী শিশু সন্তান রাতুলকে নিয়ে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল ও তার পিতা হাসান বালী হ্যাপীর পিছু নেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বানারীপাড়া পৌর শহরের হাইস্কুল সংলগ্ন দুলাল বালীর বাড়ির সামনের রাস্তায় রিক্সার গতিরোধ করে তারা হ্যাপীকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে বেদম মারধর করেন এবং এক পর্যায়ে শ্বশুর হাসান বালী জাপটে ধরে রাখেন এবং স্বামী রাসেল ধারালো চাকু দিয়ে তার বাম পায়ের রগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এসময় হ্যাপী ও তার শিশু পুত্রের আর্তচিৎকারে পথচারীরা জড়ো হলে তারা শিশুটিকে আহত হ্যাপীর কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা হ্যাপীকে উদ্ধার করে প্রথমে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।