আমদানি ব্যয় বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়ছে না রফতানি আয়। তাই বেড়েই চলছে দেশের পণ্য ও সেবায় বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ডলার, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ২৪৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে হারে আমদানি ব্যয় বাড়ছে সে হারে রফতানি আয় বাড়ছে না। তাই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে আমদানির এ প্রভাব বিনিয়োগে পড়লে তা অর্থনীতির জন্য ভালো। কিন্তু এ অর্থপাচার হলে ফল অত্যন্ত খারাপ হবে। কারণ রেমিট্যান্সপ্রবাহ অনেক কমে গেছে, ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট-বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। তবে সে হারে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানির নামে অর্থপাচার হচ্ছে কি না তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৮৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ১৮১ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২৪৫ শতাংশ বেশি।
২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরজুড়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে ৪৫ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৮১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ সময়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সেবা মূল্য ব্যয় বেশি হওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গেল অর্থবছর ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টে সেবাখাতে বিদেশিদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ১৪৪ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে ছিল (ঘাটতি) ৫৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে মোট ৫১ কোটি ডলার। এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ৩২ কোটি, যা আগের বছরে এসেছিল ২৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।