বাজেটে মোটরসাইকেল ও গাড়ি উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেছেন, আগামী বাজেটে স্থানীয়ভাবে গাড়ি ও মোটরসাইকেল উৎপাদনে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে। পাশাপাশি ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।

রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ এনবিআর কার্যালয়ে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সঙ্গে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানোসহ সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে সব ক্ষেত্রে কর হ্রাসের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিডাকশন (কর হ্রাস) চাওয়া ঠিক না। প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়ছে। গতবারের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়বে। সেজন্য রাজস্ব আয় ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে রাজস্ব আয়ের উৎস সীমিত। কর জিডিপি খুবই কম। এটি বাড়াতে হবে। মাথাপিচু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব আহরণ বাড়েনি। ফলে কর কমানোর পরিবর্তে বাড়ানো যায় এমন প্রস্তাব দরকার।

কর্মসংস্থানের জন্য সরকার শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাইছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে বেশ কয়েকটি সংযোজন শিল্প গড়ে উঠেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন মোটরসাইকেল সংযোজন করছে। মোটরসাইকেল সংযোজনে পাঁচ বছরের বিশেষ কর অব্যাহতির সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা। গাড়ি উৎপাদন বা সংযোজন করলেও এনবিআর বিশেষ সুবিধা দেবে।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় নিজেদের দাবি তুলে ধরে বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিড গাড়ির আমদানিতে সিসির স্তর পরিবর্তনের পাশাপাশি শুল্ক কমানো দরকার। হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে ১-১৬০০ সিসির স্তরে যে শুল্ক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তার সুফল খুব একটা মিলছে না। ফলে সিসি স্তরটি পরিবর্তন প্রয়োজন। রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত ২০ শতাংশ শুল্কের স্তরটি উঠিয়ে শূন্য থেকে ১৮০০ সিসি পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ও সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ শুল্ক স্তরটি উঠিয়ে ১৮০১ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ শুল্ক করার দাবি জানান তিনি। এছাড়া পুরাতন গাড়ির সংজ্ঞায় এনবিআর কমপক্ষে এক বছর ব্যবহৃত হওয়া ও এক হাজার কিলোমিটার চালানো গাড়িকে উল্লেখ করেছে। এ সংজ্ঞা পরিবর্তন দরকার।

বারভিডার প্রস্তাবের জবাবে মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, পুরতন গাড়ির সংজ্ঞা পরিবর্তন করলে নতুন গাড়িকে পুরাতন হিসেবে আমদানির সুযোগ তৈরি হবে। সরকারকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অনেকেই এ গাড়ি আমদানি করবে। আর তাতে দেশে উৎপাদন শিল্প গড়ে ওঠবে না। তবে গাড়ির সিসি বাড়ানোর প্রস্তাবটি ভেবে দেখবে এনবিআর। অবচয় হার না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে হাইব্রিড গাড়ির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সিসির স্তরটি বাস্তবসম্মত করতে কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনাও দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চালিত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন বারভিডা সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি আট ঘণ্টা চার্জ দিলে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যায়। এটি জনপ্রিয় করা গেলে জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি পরিবেশের দূষণ রোধ সম্ভব।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি চালু হয়েছে। আপনারা চাইলে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি আমদানি করতে পারেন। আমরা শুল্ক একেবারে শূন্য করার কথা বলছি না, তবে কিছুটা কমানো হতে পারে। এ বিষয়েও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কাজ করার নির্দেশন দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

বাজেটে আলোচনায় এনবিআরের ভ্যাট নীতির সদস্য মো. রেজাউল হাসান, শুল্ক নীতির সদস্য ফিরোজ শাহ আলম, কর নীতির সদস্য কানন কুমার রায়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বারভিডার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।