বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৩নং দাঁড়িয়াল ইউনিয়নের চিহ্নিত ভূমিদস্যু রাজ্জাক হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন ‘রাজ্জাক বাহিনী’র আগ্রাসী থাবায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া একমাত্র সহায় সম্পত্তি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ১৫ নিরীহ পরিবার।
গত রবিবার ওই বাহিনীর সদস্যরা এক সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি জবর দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করছিলেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভূমিদস্যুদের অবৈধভাবে দখলকৃত জমির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ভূমিদস্যু ওই চক্রের সদস্যরা সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, দাঁড়িয়াল ইউনিয়নের কোষাবড় গ্রামের কামারখালী হযরত আলী ডিগ্রী কলেজের অফিস সহকারী এবং চিহ্নিত রাজাকার গনি হাওলাদারের আপন ভাই রাজ্জাক হাওলাদার দীর্ঘদিন থেকে তার (রাজ্জাক) ভূমিদস্যুতার কারণে ওই গ্রামের ১৫ পরিবার নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সূত্রমতে, ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞান না থাকা সাধারণ মানুষের জমির রেকর্ড, ডিক্রি, খাজনা ইত্যাদি করে দেয়ার মিথ্যা প্রলোভনে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রাজ্জাক নিজ পরিবারের সদস্য আরিফুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ শামিমকে নিয়ে নীরবে নিজেদের নামে জমি লিখিয়ে নিয়ে সুযোগ বুঝে অসহায় পরিবারের সহায় সম্পত্তি জবর দখল নিয়েছেন। ভূমিদস্যু রাজ্জাকের খপ্পরে পড়ে ইতোমধ্যে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সহায় সম্পত্তি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন একই গ্রামের অটোচালক জাকির হোসেন, রশিদ হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন, আবদুর রহমান, এছাহাকসহ প্রায় ১৫টি পরিবার। সর্বশেষ রাতের আঁধারে সংখ্যালঘুপরিবারের পিতৃ-মাতৃহীন বড় ছেলে (নওমুসলিম) এসএন পলাশ ও তার ছোট ছেলে প্রশান্ত দাসের ২৬ শতক জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন রাজ্জাক ও তার সহযোগীরা। জানা গেছে, এসএন পলাশ গণমাধ্যমে কাজ করার সুবাদে বরিশাল নগরীতে বসবাস করছেন এবং তার সহোদর প্রশান্ত ঢাকাতে পড়াশোনা করেন।
এ সুযোগে রাজ্জাক তার সহযোগীদের নিয়ে পলাশ গংদের জমি অবৈধভাবে দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে পলাশ সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা দেখতে পেয়ে গত ২৮ মার্চ বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে নিষেধাজ্ঞা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে পুলিশ ভূমিদস্যু রাজ্জাকের দখল করা সম্পত্তির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
ভূমিদস্যু রাজ্জাক বাহিনীর রোষানলের শিকার সাংবাদিক এসএন পলাশ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রাজ্জাক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। দাঁড়িয়ালের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মিজান বলেন, সরকারী জমি থেকে শুরু করে এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারসহ গ্রামের অসহায় মানুষের জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করে রাজ্জাক আমাদের এলাকার একজন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ভূমিদস্যু রাজ্জাকের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোন সুফল পাননি।
ভূমিদস্যুতার অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, আমার প্রায় ২/৩ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে কিন্তু খাওয়ার মানুষ নেই। দুটি সন্তান রয়েছে তাও একযুগ যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যাশয়ী।
এদিকে রাজ্জাক বাহীনি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রাতের আধারে কাজ চলিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।