বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে ধারণা পাল্টেছে : প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে যারা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন, গত কয়েক বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অর্জন এবং সক্ষমতা আর আত্মবিশ্বাসে তাদের সেই‌ ধারণা পাল্টেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৫ জুলাই) দুপুরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ঢাকা সেনানিবাসের প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ অনেক চালেঞ্জিং ছিলো। আমাদের ওপর একটা বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো যে দুর্নীতি, এটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। এটা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমাদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিলো কানাডার আদালতে, সেখানে সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছিলো।

‘আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, সেটা আমি করতে সক্ষমতা হয়েছি। এই একটা সিদ্ধান্ত আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি…আগে যারা মনে করতো এই দেশ শুধু হাত পেতে চলবে, তারাও কিন্তু এখন সেটি মনে করে না।’

তিনি বলেন, আমরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিই। আমরা কারও কাছ থেকে হাত পেতে নিই না। আবার তা সুদসহ ফেরতও দিই। কিন্তু ভাবখানা এমন ছিলো, যে আমরা ভিক্ষা নিচ্ছি। এই যে শর্ত দেওয়া, তবে পদ্মা সেতুর এই সিদ্ধান্তের পর অতটা কেউ শর্ত-টর্ত কেউ দিতে সাহস পায় না।

‘বাংলাদেশের মানুষকে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’’ ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। হ্যাঁ, আমাদের একটা অন্ধকার যুগ গেছে। কিন্তু যখন থেকে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে, তখন থেকে যে উন্নয়নের ধারা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ অনেক পাল্টে গেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, আজকে দারিদ্রের হার ৪১.৫ থেকে ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। অতিদরিদ্র ২৫ থেকে ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ কোনও হতদরিদ্র থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষই তার বাসস্থান পাবে, খাদ্য নিরাপত্তা পাবে, শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে, তাদের কর্মসংস্থান হবে ঠিক সেইভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তি শিক্ষা দিয়ে দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে কৃষি স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম আমরা ব্যবহার করে আমাদের জনগণকে আমরা দক্ষ সমাজ অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনশক্তি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট জনগণ হবে। সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট। সব প্রতিষ্ঠানকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলছি।

তিনি বলেন, ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। বাংলাদেশ আর কারও কাছে হাত পেতে চলবে না, সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলেছি।

এসময় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের প্রতিটি বাহিনী কিন্তু দেশের মানুষের পাশে আছে। শুধু দেশে নয় শান্তিরক্ষী মিশনে যারা কাজ করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুণ হলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে স্থানীয় মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে।

‘এজন্য তারা প্রত্যেকের কাছে খুব মর্যাদা পায় এবং আমি খুব গর্ব করে বলি… যে দেশে আমাদের বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছে; সে দেশের সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধান যখন আমাদের বাহিনীর প্রশংসা করে তখন সত্যি আমার বুক গর্বে ভরে যায়। আমরা এতে যে সম্মান পাচ্ছি, সেটা ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

কোভিড ও যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে আবারও দেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কোভিড ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দুই বছর পর ২০২৬-এ আমরা বাস্তবায়ন করবো। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ৪১ প্রণয়ন করে আমরা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। তাছাড়া জাতিসংঘ এমডিজি বাস্তবায়নে আমরা সফলতার সঙ্গে করছি। অর্থাৎ সাসটেইনেবল গোল সেটাও আমরা কিন্তু বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা খুব পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছি। সুতরাং আমরা এই অর্জনগুলো সুষ্ঠুভাবে করতে পারবো। বাংলাদেশ যেন আর পিছিয়ে না যায় সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করেছি। আমরা পদ্মাপারের মানুষ সবসময় অবহেলিত ছিলাম। সেখানে আমরা একটা সেনানিবাস করেছি। তাছাড়া আরও দুটি দুটি সেনানিবাস সিলেটে ও রামুতে আমরা করেছি। অন্যান্য আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। যাতে আমাদের দক্ষতা আরও বাড়ে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজ আমরা করতে পারি।

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সালে গার্ড সদস্যদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে গার্ড ভাতা প্রচলন করে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও সহজ করতে সেনানিবাসে একটি ইনডোর পিস্তল ফায়ারিং রেঞ্জ স্থাপন করা হয়েছে। রেজিমেন্টের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৩ সালে জনবল বৃদ্ধিসহ একটি স্বতন্ত্র রেজিমেন্টে রূপান্তরিত করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় এই রেজিমেন্টে আর্মাড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) যুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা একটি ১৪ তলা ভবন নির্মাণ করে দিয়েছি।

ভবিষ্যতেও গার্ডসদের কল্যাণে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, গণভবনে সৈনিক আবাস ও আনুষঙ্গিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে এ বছর আমি পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ৫.৫ একর জমি পিজিআর’র জন্য বরাদ্দ করেছি। এখানে পরিকল্পিত পার্ক হবে। যেখানে শিশু পার্ক থেকে সব ধরনের সুযোগ থাকবে। কেউ যদি কোনও অনুষ্ঠান করতে চায়, সেই জায়গাও থাকবে।

এসময় রেজিমেন্টের প্রতিটি সদস্যের সাহসিকতা, সততা, আন্তরিকতা ও পেশাগত দক্ষতা এবং কর্তব্য নিষ্ঠায় নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।