বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে দেশের উন্নতি হয় আমরা সেটিই প্রমাণ করেছি। আমি মনে করি বিশ্বের জন্য এটা একটা দৃষ্টান্ত।’
বুধবার (১ নভেম্বর) যৌথভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর রেলযোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা আন্তঃদেশীয় আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ, খুলনা-মংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প এবং বাগেরহাটের রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট যৌথভাবে উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনটি প্রকল্পই ভারতের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বাসভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো যৌথ উদ্বোধন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যকার অনন্য সাধারণ বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি। যার মধ্যে রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংষ্কৃতিক মেলবন্ধন, এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহজীকরন ছাড়াও অনেক কিছু।
বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে উজ্জল দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেওয়ার সময়ে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সরকারের অগ্রাধিকার ছিলো জানিয়ে সরকারপ্রধান এই দুটি খাতের সরকারের অর্জিত সাফ্যল্যের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধন হওয়া তিনটি প্রকল্প উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই প্রকল্পগুলো আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আমি বিশ্বাস করি। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লানটি আরও সাশ্রয়ী মূল্যে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে বিশেষ অবদান রাখবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্যান্য ব্যয়বহুল উৎস থেকে আমাদের নির্ভরতাকে কমিয়ে নিয়ে আসবে। এই প্রকল্পটি গ্রিডের স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সাশ্রয়ী নির্ভরযোগ্য ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করবে।
আখাউড়ার রেল সংযোগ দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিশেষ করে ভারতের উত্তর পুর্বের অংশের সঙ্গে সংযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিকরন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ প্রকল্পটি মংলা বন্দরকে বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এতে করে আমদানিকৃত পণ্যের কন্টেইনারগুলো রেলপথের মাধ্যমে সহজেই দেশের উত্তর-পরবাঞ্চলে সাশ্রয়ীভাবে পরিবহন সম্ভবপর হবে।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ভারত সরকারের সহযোগিতাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর আর সেই সাথে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট যাতে ভারত ব্যবহার করতে পারে সেজন্য আমরা উন্মুক্ত করেছি। কাজেই শেমংলা ও চট্টগ্রাম পোর্ট আঞ্চলিক সহযোগিতার একটা ক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
বিগত ১৫ বছর ধরে অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশের মধ্যে একটি হিসেবে বাংলাদেশ আবির্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের দেশে যে চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ ছিলো তা ২০২২ সালে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি করে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।
‘আমাদের দেশটাকে নিয়ে আমাদের একটা স্বপ্ন আছে, লক্ষ্য আছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে।”
এ সময় সম্প্রতি ভারতের অনুষ্ঠিত জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনে দাওয়াত দেওয়ায় এবং দিল্লি সফরে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশ ও তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় করতে আন্তরিকতার জন্যও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘মুজিব:একটি জাতির রপকার’ যৌথ প্রযোজনার জন্য ভারতকে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
এ সময় আসন্ন দীপাবলী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদি ও ভারতের জনগণকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি বক্তব্য রাখেন।