পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ও জাপান। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি জাপানের টোকিওতে এ বৈঠক হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ঢাকার পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের চতুর্থ ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) জাপানের টোকিওতে হতে যাচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সার্বিক পর্যালোচনা, পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, জাপান বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমন্বিত অংশীদারত্ব থেকে কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়াতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সুনীল অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আবশ্যকতা রয়েছে।
জাহাজ নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ
মস্কোয় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা রিপোর্টটি পেয়েছি। ওখানে রাশিয়ার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, নির্দিষ্ট করে কোনো জাহাজের কথা বলা হয়নি। নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ৬৯টি জাহাজকে কেন বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না, সে সম্পর্কে তারা তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে।
সেহেলী সাবরীন জানান, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় রাশিয়ার উদ্বেগের বিষয়টি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূত রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। কেন জাহাজকে ভিড়তে দেওয়া হয়নি, সে প্রসঙ্গে বলেছেন রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশি দূতকে ডেকে যে বার্তা দিয়েছে মস্কো, সেটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বার্তার বিষয়ে পরবর্তীতে ঢাকার পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা পরে গণমাধ্যমকে জানানোর কথা বলেন মুখপাত্র।
রাশিয়ার জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। তার ভাষায়, আমাদের বোঝাপড়া এতটাই ভালো যে, আমরা মনে করি না—জাহাজের একটি বিষয় নিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
মুখপাত্র বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা আছে। জাতিসংঘে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গৃহীত প্রস্তাবে আমাদের পক্ষে রাশিয়ার সমর্থন ছিল। সেটা একবার না দুই দুই বার ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি, তখনও কিন্তু গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে বাংলাদেশ রাশিয়া একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, জাহাজ সম্পর্কিত সমস্যাটি ছয় সপ্তাহের আগে। কিন্তু, আমাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। সুতরাং আমরা মনে করি, আমাদের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
রাশিয়ার সেই জাহাজটি অন্য দেশেও ভিড়তে না পারার প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, যে জাহাজটিতে মালামাল আসতে পারেনি, সেটি কিন্তু শুধু বাংলাদেশের বন্দরে অবতরণ করতে পারেনি তা নয়। সেটি তারা (রাশিয়া) অন্য গন্তব্যে আরও অনেক দেশে অবতরণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু, তারা (রাশিয়া) সেটা পারেনি। সুতরাং, এটা শুধু আমাদের ক্ষেত্রে নয়।
রাশিয়ার জাহাজগুলোতে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক নয়; যুক্তরাষ্ট্রের। সুতরাং বাংলাদেশ কেন এটি মানছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, অন্য রাষ্ট্রগুলো কিন্তু একই পদক্ষেপ নিয়েছে। উরসা মেজরের পর আরও রাশিয়ার জাহাজ কিন্তু বাংলাদেশে এসেছে, সেগুলো নিষেধাজ্ঞাবহির্ভূত জাহাজ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বাণিজ্যনির্ভর দেশ। আমরা কিন্তু বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিদ্যমান রাখছি এবং আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিতের জন্য কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ৮০ পারসেন্ট এক্সপোর্ট আছে।
কানাডিয়ান উন্নয়নমন্ত্রী আসছেন আজ
পাঁচ দিনের সফরে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সফরে আসছেন কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী হারজিত এস সাজ্জান।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, তার এ সফর বাংলাদেশ-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি এবং রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে কানাডার সক্রিয়তাসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
সাজ্জানের সফরসূচি সম্পর্কে সেহেলী বলেন, সফরকালে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করবেন। সরকারি ও বেসরকারি (এনজিও) কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকা এবং কক্সবাজারে মতবিনিময় করবেন। এছাড়া, কানাডার আর্থিক সাহায্যে পরিচালিত কয়েকটি প্রকল্পও পরিদর্শন করবেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ২৭ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করবেন।