দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ কয়েক দশক ধরে মার্কিন অংশীদারত্বের ওপর নির্ভর করতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
সোমবার (৪ এপ্রিল) পিটার হাস দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর উল্লেখযোগ্য প্রথম পাঁচ দশকের মধ্য দিয়ে, আমি মনে করি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো কোনো অংশীদার খুঁজে পায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগামী ৫০ বছরেও সেই অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জনগণ উভয়ের একই লক্ষ্য: একটি গতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ গণতন্ত্র, বিচারিক জবাবদিহিতা ও সবার জন্য মৌলিক মানবাধিকার।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের দুটি দেশ পরস্পরের মিত্র। বাংলাদেশ অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কয়েক দশক ধরে আমাদের অংশীদারত্বের ওপর নির্ভর করতে পারে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর বিস্ময়কর।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর অন্ধকার থেকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যখন এর অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল, অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিল ও দেশের অগণিত সেরা মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেকের ধারণা ছিল বাংলাদেশ কখনোই নিজের উদ্যোগে উন্নতি করতে পারবে না ও চিরকাল অন্যের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল থাকবে। সেসব দিন অনেক আগেই চলে গেছে। আজ বাংলাদেশ একটি সাফল্যের নজির হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।
বাংলাদেশি জনগণের প্রয়াস, সমস্যা কাটিয়ে ওঠার বিচক্ষণতা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করে তিনি বলেন, দেশটি স্বাস্থ্য ও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করেছে। ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়ন অর্জন করেছে ও বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হবে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন তার প্রতিবেশীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার নগদ অর্থ সঙ্কটের সময় সহায়তার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল ও মালদ্বীপকে কোভিড সহায়তা দিয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। আরও বেশি সংখ্যক যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেশন এখন তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের মধ্যে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথা স্মরণ করে হাস বলেন, ১৯৭২ সালের এ তারিখে আমরা প্রথম বন্ধুত্বের হাত ধরেছিলাম, তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়ের পর জীবন বাঁচাতে, সন্ত্রাসবাদ ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ও মানুষকে সুস্থ ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনে সহায়তা করতে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৬১ মিলিয়নেরও বেশি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন পেয়েছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোকে তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর আহ্বান জানানোর জন্য একটি সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের একটি অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা রয়েছে কারণ উভয় দেশই স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে, গণতন্ত্রের প্রতি আন্তরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ও তারা শিখেছে যে গণতন্ত্র একটি প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, মানুষ সহিংসতা ও বর্ণবাদের অবর্ণনীয় ক্রিয়াকলাপ প্রত্যক্ষ করেছে। আমেরিকানরা জনগণকে জবাবদিহি করতে ও প্রকৃত পরিবর্তন কার্যকর করার প্রচেষ্টায় কখনও কখনও শোরগোলের মধ্যেও এসব সমস্যা প্রকাশ্যে, সততার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অনেকেই একই কাজ করছে, ও আমরা তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করি।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com