বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের উপচে পড়া ঝুড়ি: আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়তে  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী সমাবেশ। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ  হয়ে যায় মিলনায়তন। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাই যেন একপ্রাণ হয়েই অংশ নিয়েছিলেন সমাবেশে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রাজশাহী স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং- এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ছিলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান। সম্মানিত অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাদয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম খুরশীদ হোসেন ও রাবি প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর অনেকে তাচ্ছিল্য করে বলেছিলো- বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। এখন সেই বাংলাদেশ উন্নয়নের উপচে পড়া ঝুড়ি। এই বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নেরই রোল মডেল না, বরং জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলেরও রোল মডেল। কিন্তু আমরা যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছি তখন একটি গোষ্ঠী দেশকে পেছনে টেনে ধরার চেষ্টা করছে জঙ্গিবাদ দিয়ে, সন্ত্রাস দিয়ে এবং মাদক দিয়ে।

তিনি বলেন, মাদক সমাজের জন্য বড় হুমকি। সবাইকে সাথে নিয়ে যেভাবে আমরা জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করেছি। এখন সময় এসেছে সবাইকে সাথে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার।

মাদক একটি সামাজিক সমস্যা উল্লেখ করে আইজি বলেন, মাদককে শুধু পুলিশি সমস্যা হিসেবে ধরলে ভুল হবে। এটি সামাজিক সমস্যা। একে সামাজিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। আমরা শুধু আইনগত দিক দেখতে পারি। এছাড়াও যে বিষয়গুলো আছে অর্থাৎ মাদক পরিবহন, বিপনন, সেবন এগুলো মোকাবেলায় আপনাদের সহযোগীতা লাগবে। কেননা মাদক একটি ব্যাধি। আপনাদের সহযোগীতা পেলে জঙ্গিবাদের মতো মাদকের ভয়াবহতাও আমরা রুখতে পারবো।

মাদক ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উভয়কেই ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পরিবারের দায়িত্ব হলো সন্তান যখন পরিবারের সাথে থাকে না তখন কোথায় থাকছে, কার সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে সেগুলো খেয়াল রাখা। আর যারা শিক্ষক আছেন তাদের দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিষয়ে সচেতন করা। এছাড়া এসব বিষয়ে কোন তথ্য থাকলে সেগুলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো। মূলত মাদক অর্থনীতির চাহিদা ও যোগান নীতিকে অনুসরণ করে চলে। যতদিন মাদকের চাহিদা থাকবে ততদিন কোনো না কোনোভাবে মাদকের যোগান আসবে। তাই চাহিদা ও যোগান দুটিই বন্ধ করতে হলে সবার সহযোগীতা প্রয়োজন।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আইজি বলেন, যুব সমাজ- তোমরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। আমি বিশ্বাস করি আজকের তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সামনে ২০২১ ও ২০৪১ যে ভিশন দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে আমরা সঠিক পথেই আছি। আশা করছি সঠিক সময়ের আগেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। তবে এক্ষেত্রে বড় বাধা হলো মাদক ও জঙ্গিবাদ। তাই যুব সমাজকে এই দুটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে।

এসময় তিনি মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে না বলতে বললে পুরো মিলনায়তন থেকে এককন্ঠে ‘না’ শব্দটি উচ্চারিত হয়। যেন একপ্রাণ হয়েই সবাই শপথ নেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে।

অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলেন, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নত দেশ হয়ে উঠছে। যা দেখে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পর্যায়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সেরকম একটি বিষয় হলো জঙ্গিবাদ। যার কোন সীমান্তরেখা নেই। শুধুমাত্র আমাদের দেশে নয়, বরং এটি বিভিন্ন দেশেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আমরা পুলিশ বাহিনী শুধু ‘কাউন্টার টেরোরিজম’ বা জঙ্গিবাদকে দমিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু জঙ্গিবাদকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে আপনাদের সহায়তা লাগবে।

মাদকসেবীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে মাহাবুবর রহমান বলেন, শুধু যে সাধারণ মানুষই মাদকাসক্ত, তা নয়। আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও অনেকে আছে মাদকাসক্ত, অনেক শিক্ষকও আছেন মাদকাসক্ত, সরকারি উর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা আছেন মাদকাসক্ত। আমরা মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাচ্ছি। সামনের দিনে মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী উভয়ের জন্যই বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। জঙ্গিবাদের মতোই মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হচ্ছে। এখন শুধু প্রয়োজন সকলের সহযোগীতা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি সুমাইয়া রহমান কান্তি। অনুষ্ঠানে শুরুতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আইজি-কে এবং স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং এর পক্ষ থেকে অতিথিবৃন্দকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।