বাংলাদেশে টমেটো রপ্তানিতে ধস, কাঁদছেন ভারতীয় চাষিরা

লেখক:
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম টমেটো বাজার বলে দাবি করা হয় কর্ণাটকের কোলারকে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যটি পৌঁছে যায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়াসহ ভারতের অন্যান্য বাজারগুলোতে। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার জেরে রপ্তানিতে ধস নামায় চরম বিপাকে পড়েছেন কোলারের টমেটো চাষিরা। ফসল বিক্রি করে লাভ হওয়া তো দূর, এখন খরচ ওঠানোই কঠিন হয়ে গেছে তাদের জন্য।

কোলারের চাষিরা সিএনএন-নিউজ১৮’কে জানিয়েছেন, অঞ্চলটিতে রপ্তানিযোগ্য টমেটোর দাম একলাফে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের একেক বাক্স টমেটো আগে ১১শ-১২শ রুপিতে বিক্রি হতো। সেটি এখন স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫০-৫০০ রুপিতে।

 

সাদ্দাম হোসেন নামে স্থানীয় এক চাষি বলেন, কোলার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০টি ট্রাকে করে টমেটো যেতো বাংলাদেশে। প্রতিটি ট্রাকে প্রায় ৯০০ বাক্স টমেটো থাকতো। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হলে সেই সংখ্যা ২০-এ নেমে আসে এবং গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় সব চালান বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এখন রাস্তার পাশের বাজারগুলোতে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। এটি আমাদের জীবিকার ব্যাপার।

বাংলাদেশে টমেটো রপ্তানি করেন এমন আরেক চাষি ও ব্যবসায়ী শেখ সেলিম। তিনি জানান, সাধারণত এসব রপ্তানিযোগ্য টমেটো আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করলে কেজিপ্রতি ৩৫ রুপি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন অন্ধ্র প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো বাজারগুলোতে মাত্র আট থেকে ১০ রুপি কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।

 

চাষিরা বলছেন, এক একর জমিতে টমেটো চাষ করতে এক থেকে দুই লাখ রুপি বিনিয়োগ করতে হয়। ফসল ভালো হলে তারা প্রতি একরে প্রায় ২৫০ বাক্স ফলন আশা করতে পারেন। কিন্তু যখন বাংলাদেশের মতো বাজারে সেগুলো প্রবেশ করতে পারে না, তখন অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে টমেটোর দাম বাক্সপ্রতি ২০০ রুপিতে (প্রায় ১৩ রুপি কেজি) নেমে আসে।

এক মাস আগেও ভারতের বাজারে প্রতি কেজি টমেটোর দাম ১০০ রুপির ওপরে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে রপ্তানিতে ধস নামায় ভারতীয় বাজারে টমেটোর দাম কেবল কমেই যায়নি, এটি চাষিদের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণও হয়েছে।

 

রবি গৌড়া নামে কোলারের আরেক চাষি বলেন, ছত্তিশগড়, বিলাসপুর, রায়পুরের মতো বাজারগুলোতে মাঝারি আকারের টমেটো বিক্রি হয় প্রতি ক্রেট ৯০০ থেকে ১৫শ রুপির মধ্যে। অন্যান্য দেশে যেগুলো পাঠানো হয়, সেগুলো আরও রসালো। এর চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু এখন স্থানীয় বাজারে প্রতি ক্রেট টমেটো ৫০০ রুপিতে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বাঁচবো কীভাবে?