গত বছর ধান রোপণের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত রাসায়নিক সার সরবরাহ করতে না পারায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল নেপাল সরকার। এ কারণে এ বছর আগেভাগেই সতর্ক তারা। সময়মতো কৃষকদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণে সার পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর দেশটি। আর এর জন্য নেপালিদের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ বছরের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ সার আমদানি করছে নেপালের সরকার। খবর কাঠমান্ডু পোস্টের।
নেপালের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সচিব যোগেন্দ্র কুমার কার্কি বলেছেন, আগামী জুলাইয়ে শেষ হতে চলা ২০২০-২১ অর্থবছরে সারের সরবরাহ রেকর্ড পাঁচ লাখ টনে পৌঁছানোর বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
গত বছরের ব্যর্থতার পর কৃষকদের কাছে সময়মতো রাসায়নিক সার সরবরাহে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল নেপাল সরকার। ফলে আগামী জুনে যখন হাজার হাজার কৃষক যখন আবারও ধান রোপণ শুরু করবেন, তখন আর তাদের সার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
কার্কি বলেন, এর কারণ, আমরা রাষ্ট্রীয় ভর্তুকিপ্রাপ্ত সারের পরিমাণ বাড়াতে সরকারের কাছ থেকে বড় বাজেট পেয়েছি।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে সারের ভর্তুকিতে ১ হাজার ১০০ কোটি নেপালি রুপি বরাদ্দ করেছে দেশটির সরকার। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৯০০ কোটি রুপি। প্রতি বছর মোটমাট প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি রুপির রাসায়নিক সার আমদানি করে নেপাল।
নেপালের কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশটিতে বার্ষিক রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে সাত লাখ টনের কিছু বেশি। সেখানে সরকারিভাবে সার আমদানি হয় মাত্র তিন লাখ টন। অর্থাৎ, নেপালের মোট চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ পূরণ করে সরকারি ভর্তুকিপ্রাপ্ত সার। বাকিটা পূরণ হয় বেসরকারি আমদানি বা উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানির মাধ্যমে পৌঁছানো সার দিয়ে।
গত জুনে ধান রোপণ মৌসুমের শুরু থেকেই চরম সার সংকটে পড়েছিলেন নেপালের কৃষকরা। কোভিড-১৯ মহামারি বৈশ্বিক উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত করায় প্রথমে সংকট দেখা যায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ডায়ামোনিয়াম ফসফেটের (ডিএপি)। এরপর ঘাটতি দেখা দেয় ইউরিয়ারও।
এই সংকট মোকাবিলায় নেপালের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ঘনশ্যাম ভুসাল বাংলাদেশ থেকে ইউরিয়া নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং ৫০ হাজার টন আমদানির অনুরোধ জানান।
কাঠমান্ডু পোস্টের খবর অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে ইউরিয়ার সেই চালান শিগগিরই নেপালে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
নেপালের কৃষি সচিব বলেন, আমাদের মজুত বাড়াতে বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার টন রাসায়নিক সার আসতে শুরু করেছে।
নেপালের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, গত বছর দেশটিতে প্রায় আড়াই লাখ টন সারের ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। এর কারণে সেখানকার অনেক জেলার কৃষকরা মাত্র ১৪ রুপির সার ৫০ রুপিতে কিনতে বাধ্য হন।
তবে চলতি বছর তেমন সংকট আশা করা যায় হবে না। কৃষি সচিব কার্কি জানিয়েছেন, নেপালে বর্তমানে ৮০ হাজার টন সারের মজুত রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ৫০ হাজার টনসহ আরও দুই লাখ টন সার আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এবারের ধান রোপণ মৌসুমের জন্য এটা যথেষ্ট। আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে আরও দুই লাখ টন আমদানির টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।