তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ যে বিস্ময়কর উন্নয়ন অর্জন করেছে তা বিশ্ব গণমাধ্যমে তুলে ধরা প্রয়োজন।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকারের আমন্ত্রণে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকা থেকে আগত ২৫টি দেশের ৪৭ জন গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
তথ্যসচিব আবদুল মালেক, প্রধান তথ্য অফিসার জয়নাল আবেদীন, সফর সমন্বয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মাসুদুর রহমান এবং তথ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা, যিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ত্রিশ লাখ প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের চরম ত্যাগের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও ১৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যায় বিশ্বের একটি বৃহৎ দেশ।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমরা বিশ্বে মিঠা পানির মাছ ও সবজি উৎপাদনে ৪র্থ ও আলু উৎপাদনে ৭ম। শুধু তাই নয়, পঞ্চাশের দশকে ৪৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে খাদ্য ঘাটতির দেশ, যার ভূমি একটুও বাড়েনি, সেই দেশ আজ খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত এবং রপ্তানিকারক। কৃষিখাতে এ অভূতপূর্ব ঘটনা আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থারও গবেষণার বিষয়’, বলেন ড. হাছান মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা জেনে আরো খুশি হবেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য গতিশীল নেতৃত্বে ২০০৮ সালের ৬শত ডলারের মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে এখন প্রায় ২ হাজার ডলার, রপ্তানি ১০ মিলিয়ন থেকে আজ ৪২ মিলিয়ন ডলার, মানুষের গড় আয়ু ৬৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৮ বছর। মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব সূচকে আমরা পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছি।’
‘১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনা এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের অনুমতি দেন’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদার নীতির কারণে বাংলাদেশে গত দশ বছরে গণমাধ্যম স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয়েছে। সরকারি ৪টি টেলিভিশনসহ দেশে অনুমোদিত ৪৪টি বেসরকারি টেলিভিশনের ৩৩টি এখন সম্প্রচারে রয়েছে। ২৮টি অনুমোদিত এফএম বেতারের ২২টি এবং অনুমোদিত ৩২টি কমিউনিটি বেতারের ১৭টির সম্প্রচার চলছে। ২০০৮ সালে বছরে যেখানে ৬শত দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ হতো, তা এখন প্রায় ১২শত। তখনকার হাতে গোনা অনলাইন নিউজপোর্টালের সংখ্যা এখন প্রায় ৩ হাজার।’
‘শুধু গণমাধ্যমের প্রসারই নয়, গণমাধ্যমের কল্যাণেও বর্তমান সরকারের ভূমিকা সর্বত্র প্রশংসিত’ বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই দেশে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৩১ তলা বিশিষ্ট ভবন এবং বহুমুখী তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছে, প্রেস ইনস্টিটিউটে পেশাগত প্রশিণের সঙ্গে চালু করেছে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি।’
সফররত সাংবাদিকবৃন্দ বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনে অংশ নেওয়াসহ দেশ ঘুরে দেখবেন এবং এদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতির কথা তাদের লেখনী ও সম্প্রচারে তুলে ধরবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী। এ সময় বিদেশি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নেরও জবাব দেন তিনি।
শ্রীলংকা, যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, মিশর, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, গ্রীস, বাহরাইন, জাপান, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, উজবেকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইথিওপিয়া, তুরস্ক, জার্মানী, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ফ্রান্স, হংকং ও ইতালির বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৪৭জন প্রতিনিধি ১৩ থেকে ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করছেন।