দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়, স্বপ্ন বাস্তব করার মতো মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন বোলাররা। কিন্তু চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই স্বপ্ন ভাঙলো লজ্জাজনক হারে।
২৭৪ রান তাড়া করতে নেমে কেশভ মহারাজ আর সাইমন হার্মারের ঘূর্ণিতেই মাত্র ৫৩ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ডারবান টেস্টে ২২০ রানের বড় হার সঙ্গী হয়েছে মুমিনুল হকের দলের। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
রান তাড়ায় নেমে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশি ব্যাটাররা। কেশভ মহারাজের বিষাক্ত ঘূর্ণিতে একটা সময় ৩৩ রানেই চলে গিয়েছিল ৭ উইকেট।
বাংলাদেশের রান ৫০ পার হবে কি না, সেই শঙ্কাই জেগেছিল। নাজমুল হোসেন শান্ত একটা প্রান্ত ধরে কিছুটা লজ্জা দূর করলেন। ৫০ ছুঁতে পারলো টাইগাররা।
তবে ৫০ হতেই ভরসা হয়ে থাকা শান্তও আউট হয়ে গেলেন। হারমারের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন শান্ত। ৫২ বলে একটি করে চার-ছক্কায় তিনি করেন ২৬ রান।
দুই বোলার মিলেই শেষ করেছেন বাংলাদেশের ইনিংস। কেশভ মহারাজ ৩২ রানে ৭ উইকেট, হারমার ২১ রানে নেন বাকি ৩ উইকেট।
আগের দিন বড় ধাক্কা খেলেও অনেক আশা নিয়ে পঞ্চম দিনে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশে। উইকেটে ছিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তার সেই অভিজ্ঞতা টিকলো মাত্র পাঁচ বল।
দিনের প্রথম ওভারেই দলকে বিপর্যয়ে রেখে শূন্য করে ফিরলেন মুশফিক। কেশভ মহারাজের ডেলিভারি প্যাডে লাগলে আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। মুশফিক রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যায়, বল পরিষ্কার উইকেটে আঘাত হেনেছে।
তারপর লিটন দাসও আত্মঘাতী শট খেলে বসেন। মহারাজকে তুলে মারতে গিয়ে মিডঅনে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার (২)। তাতে বাংলাদেশ পড়ে মহাবিপর্যয়ে। ১৬ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় টাইগাররা।
সেই বিপর্যয় আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি মুমিনুল হকের দল। একে একে সাজঘরের পথ ধরেন ইয়াসির আলি রাব্বি (৫), মেহেদি হাসান মিরাজরা (০)।
ইয়াসিরকে বোল্ড করে নিজের ফাইফার পূর্ণ করেন মহারাজ। হারমারকে মারতে গিয়ে পিটারসেনের ক্যাচ হন মেহেদি মিরাজ। ৩৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বড় লজ্জার মুখে পড়ে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে কোনোমতে দলকে পঞ্চাশ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন শান্ত। তিনিও হারমারের ঘূর্ণিতে পা এগিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন স্ট্যাম্পিয়ের ফাঁদে।
ডারবানের কিংসমিডে আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২০৪ রানে অলআউট করে ২৭৪ রানের লক্ষ্য পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে রান তাড়ায় নেমে চতুর্থ দিনেই ৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে মুমিনুল হকের দল।
সাইমন হার্মারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লিপে ধরা পড়েন সাদমান। রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। প্রথম ইনিংসেও মাত্র ৯ রান করতে পেরেছিলেন এ বাঁহাতি ওপেনার।
বাংলাদেশের ইনিংসের পঞ্চম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন কেশভ মহারাজ। প্রথম বলেই ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হয়ে যান ৪ রান করা মাহমুদুল হাসান জয়। ওভারের পঞ্চম বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে দৃষ্টিকটুভাবে লেগ বিফোর হন অধিনায়ক মুমিনুল (২)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ১২১ ওভারে ৩৬৭/১০ (টেম্বা বাভুমা ৯৩, ডিন এলগার ৬৭; খালেদ আহমেদ ৪/৯২, মেহেদি মিরাজ ৩/৯৪)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১১৫.৫ ওভারে ২৯৮/১০ (মাহমুদুল হাসান জয় ১৩৭, লিটন দাস ৪১, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৮; সাইমন হারমার ৪/১০৩)
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস: ৭৪ ওভারে ২০৪/১০ (ডিন এলগার ৬৪, রায়ান রিকেটরটন ৩৯*; এবাদত হোসেন ৩/৪০, মেহেদি মিরাজ ৩/৮৫)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৫৩/১০ (শান্ত ২৬, তাসকিন ১৪, ইয়াসির ৫, জয় ৪, সাদমান ০, মুমিনুল ২, মুশফিক ০, লিটন ২, মিরাজ ০; কেশভ মহারাজ ৭/৩২, হারমার ৩/২১)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২২০ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।