বাংলাদেশিদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার আশ্বাস চীনের

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

চীন বাংলাদেশি নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্রবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ঝাও কেঝির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

সকালে চীনের জননিরাপত্তা বিষয়কমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর সচিবালয়ে উপস্থিত হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় চীনের মন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে পুলিশের একটি দলের সালাম নেন ঝাও কেঝি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশিদের জন্য চীনের ভিসা সহজ করতে বলা হলে তারা অন অ্যারাইভাল ভিসা চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। এর ফলে সময়ের অভাবে কোনো বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যেতে না পারলে চীন সরকার তাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেবে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীসহ অন্যদের চীনের ভিসা পেতে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কখনও কখনও আবার যথাসময়ে ভিসা পান না। তাই চীন সরকার অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার বিষয়টি ভাবছে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তারা ব্যবস্থা নেবে এবং ঘোষণা দেবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বৈঠকে চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তিগুলো হলো- প্ল্যান অব অ্যাকশন অন ল এনফোর্সমেন্ট ট্রেইনিং কো-অপারেশন, কো-অপারেশন ডকুমেন্ট অন এস্টাবলিশমেন্ট অব জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং সাইনিং অব দ্য লেটার অব এপচেঞ্জ অন পুলিশ ইকুইপমেন্ট এইড।

তিনি বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু, জননিরাপত্তা, আঞ্চলিক শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো, সন্ত্রাসবাদ দমনে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও প্রশিক্ষণ, সাইবার অপরাধ, ফায়ার সার্ভিস, কাউন্টার টেররিজম (সন্ত্রাস দমন) ও মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার) নিয়েও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে রাজি হয়েছে দু’দেশ। ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম দমনে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে কথা হয়েছে। এছাড়া চীন বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় তারা প্রশংসা করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন চীনা মন্ত্রী।

এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ যে ভিকটিম হয়েছে সেটা চীন উপলব্ধি করছে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসাও করেছে তারা। তারা আশ্বাস দিয়েছেন রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক হবে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী তিন দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন, সেখানেও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আসে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও এ সংকট নিরসনে চীনের পক্ষ থেকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ, কোস্ট গার্ড, বিজিবি ও আনসারের ডিজি এবং চীনের ২৪ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।