বাঁশখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও দুই শ্রমিকের মৃত্যু

:
: ৩ years ago

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও দুই শ্রমিক মারা গেছেন। এদের মধ্যে শিমুল আহমেদ বাবু (২৩) নামে এক শ্রমিক বুধবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এছাড়া রাজেউল ইসলাম (২৫) আরেক শ্রমিক মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) ভোর রাতে নগরের পার্কভিউ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। এ নিয়ে গত ১৭ এপ্রিলের সংঘর্ষের ঘটনায় মোট সাত শ্রমিক নিহত হলো।

শিমুল আহমেদ বাবুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শীলব্রত বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘বাঁশখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় শিমুল আহমেদ বাবু নামে গুলিবিদ্ধ এক শ্রমিক বুধবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেকের ছেলে বলে জেনেছি।’

রাজেউল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরের বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের কর্মকর্তা মোশরাত জিহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বাঁশখালীতে গুলিবিদ্ধ রাজেউল নামে এক শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা বলে জেনেছি।’

এর আগে গত, ১৭ এপ্রিল বাঁশখালীর গণ্ডামারা এলাকায় নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত পাঁচজন হলেন- কিশোরগঞ্জের ফারুক আহমদের ছেলে মাহমুদ হাসান রাহাত (২২), চুয়াডাঙ্গার অলিউল্লাহর ছেলে মো. রনি হোসেন (২৩), নোয়াখালীর আব্দুল মতিনের ছেলে মো. রায়হান (১৯), চাঁদপুরের মো. নজরুলের ছেলে মো. শুভ (২২) এবং বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনার আবু ছিদ্দিকির ছেলে মাহমুদ রেজা (১৯)।

হতাহতের ঘটনায় একই দিন দিবাগত রাতে দুটি মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে থানার এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আড়াই হাজার জনের একটি মামলা করেন। অপর মামলা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিফ কোর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও এক হাজার ৫০ জনকে আসামি করে দায়ের করেছেন।

জানা গেছে, ঘটনার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ কয়েক দিন বন্ধ থেকে আবার আস্তে-ধীরে চালু হচ্ছে। বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে একপ্রকার পুরুষশুণ্য হয়ে পড়েছে এলাকাটি। বেশিরভাগ শ্রমিকরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।

ওইদিন সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

এরপর একই দিন সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি। চার সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পুলিশের একজন, কলকারখানা অধিদফতর থেকে একজন এবং বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে একজন সদস্য নেয়া হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বৈঠক শেষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাঁশখালীতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হবে। নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে তিন লাখ এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তার করা হবে।’

এছাড়া ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকেও গঠন করা হয়েছে আরেকটি তদন্ত কমিটি। ওই কমিটিতে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাশেন ও ক্রাইম) জাকির হোসেন, রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) নেছার উদ্দীন, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) কবির হোসেনকে। তাদেরকেও সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।

বাঁশখালীর উপজেলা সদরের দক্ষিণ-পশ্চিমের দশ কিলোমিটার পরেই গণ্ডামারা ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার প্লান্ট। ২০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প নির্মাণ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ এসআলম ও চীনের সেফকো ত্রি-ইলেকট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে দেশি-বিদেশি কয়েকহাজার শ্রমিক। স্থানীয় শ্রমিক আছে প্রায় ৫০০ জন। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে প্রকল্পটি।