মোঃ শাহাজাদা হিরা: ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ, তাই ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে ফুলের বরতা নিয়ে। প্রকৃতি সেজেছে নব সাজে প্রকৃতির এই সাজ বলেদিচ্ছে বসন্ত এসেছে। আহা, আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়… কবিগুরুর এ গানের প্রতিচ্ছবির মতোই আজ বাংলার প্রকৃতিতে এসেছে বসন্তের ছোঁয়া। ঋতুরাজ বসন্তকে বরণের জন্য প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ রূপে। আজ মঙ্গলবার, ১৪২৪ বঙ্গাব্দের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিন। গাছের নতুন পাতা, শিমুলের ডালে আগুন রাঙা বাসন্তী ফুল জানান দিচ্ছে, ঋতুচক্র এখন পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না ঠিকই, কিন্তু বসন্ত লুকিয়ে আসতে পারে না। প্রকৃতি তার নতুন সাজে জানান দেয়, বাতাসে লাগিছে দোলা। বসন্তকে বরণ করছে নগরবাসী।
সোমবার থেকেই সাজ সাজ রবে দিনগুলো আরও ঝকঝকে হতে শুরু করেছে। পহেলা ফাল্গুনের রেশ না কাটতেই বসন্তের দ্বিতীয় দিনে ভালবাসা দিবস, আর উৎসবের নগরী হয়ে উঠেছে বরিশাল। বসন্ত মানে প্রেম, প্রকৃতির কাব্য। বসন্ত মানে আজি বাতাসে বহিছে প্রেম, হৃদয়ে নেশা। সেই নেশা বাতাসে প্রাণচঞ্চলতার। বরিশালের রাজপথে রাজ করছে বাসন্তী রঙের শাড়ি। সঙ্গে গাঢ় রঙের আধিক্যও আছে বছর কয়েক ধরে। বাসন্তী, লাল, হলুদ আর সবুজে রঙিন হয়ে উঠবে বরিশালের পথঘাট।
দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই গেয়ে উঠবেন- মনেতে ফাগুন এলো..কিংবা ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্তৃ। প্রতিবছর নিয়ম করেই ঋতুরাজ বসন্ত ফাল্গুন আর চৈত্রকে নিয়ে এসে উকি দেয় ষড়ঋতুর ঘরে, এগিয়ে থাকা ফাল্গুনের প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয় তার আগমন। শীতের শেষ তথা মাঘের মাঝামাঝি থেকেই প্রকৃতিতে বইতে থাকে বসন্তের আগমনী হাওয়া, এ যেন জানান দেয়া আমি ঋতুরাজ আমি বসন্ত আমি আসছি।
ঋতুরাজ বসন্তকে নিয়ে তাইতো ভালোবাসার কমতি নেই, ফাল্গুনের প্রথম প্রহরে শহুরে মানুষগুলো নাচে গানে মুখরিত করে বরণ করে নেয় বসন্তকে। বরিশালে আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে প্রস্তুত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। নগরীর জগদীশ স্বারস্বত স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে উদীচী ও বরিশাল নাটক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর উদ্যোগে সকাল খেকেই বসন্তবরণ উৎসব পালনে নানান কর্মসূচীর আয়োজন করা হয় দিনভর চলবে বসন্ত বরণের অনুষ্টান পহেলা ফাল্গুন । বসন্ত নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠান থাকবে আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে।
ফুল প্রেমীদের হাতে অসংখ্য ফুল দোকান থেকে চলে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে কারো খোপায়, হয়েছে গলার মালা, মাথায় মুকুট, হাতের ব্রেসলেট। বসন্ত বরণকে ঘিরে বাসন্তি, হলুদ গাঁদা এবং ঝারবালা ফুলের বিক্রি বেশি হবে। এর পাশাপাশি গ্যারোডিলাক্স ফুল দিয়ে তৈরী করা গোল চাক্কিও বিক্রি হবে দেখার মতো। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিপুল অংকের ফুল বিক্রি হবে বলে ধারনা করেছে বরিশালের ব্যবসায়ীরা। দুই দিবসে ফুলের অপরিহার্য চাহিদা বয়েছে। বরিশাল ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুজাহার আলী গাজী বলেন, প্রতিটি চাক্কির মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মঙ্গল ও বুধবার প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়, গ্যারোডিলাক্স ফুলের স্টিক ৩০ টাকা এবং রজনীগন্ধার স্টিক বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা করে।
সব ঋতুকে বরন করে নেয়ার পর ঋতুরাজ বসন্তে এসে ক্ষান্ত হয় বরণডালা, প্রকৃতিতে আসে পরিবর্তন, পুরোনোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আসে নতুনের হাতছানি। গাছের শাখায় পুরোনো পাতা ঝরে নতুন পাতা গজিয়ে উঠে, বেজে উঠে ঝরাপাতার গান “ শেষ পাতা ঝরে গেল যেতে যেতে বলে গেল এবছর আমি আর আসবোনা, আগামী ফাগুনে জানালায় দাঁড়িয়ে আমার প্রতিক্ষা করো।