বর্তমান কমিটির ৫-৬ জনই থাকছেন না নতুন পরিচালনা পর্ষদে!

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে এখন বিসিবিতে যে পরিচালনা পর্ষদ আছে, এ বছরই তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা হয়েছিল। এর পরপরই নির্বাচিত হয়েছিল বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। তার মানে চার বছর প্রায় শেষ।

গত ২৬ আগস্ট বার্ষিক সাধারণ সভায় বিসিবিপ্রধান জানিয়ে দিয়েছেন, শিগগিরই বোর্ড নির্বাচন এবং আগামী ১ বা ২ সেপ্টেম্বর বোর্ড পরিচালক সভায় নির্বাচনের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।

বিসিবি প্রধানের একটি উক্তি নিয়ে অবশ্যই এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অনেকেই ধরে নিয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন বুঝি আর বোর্ড সভাপতি পদে থাকবেন না।

আসলে কী তাই? নাজমুল হাসান পাপনের পুরো মন্তব্যটা মন দিয়ে শুনলেই পরিষ্কার হবে, তিনি থাকবেন কী থাকবেন না? প্রশ্ন ছিল, নাজমুল হাসান পাপনকে কী আবারও বিসিবি সভাপতি হিসেবে দেখা যাবে?

পাপন জবাব দেন এভাবে, ‘ভেরি ডিফিকাল্ট এটা বলা। ১ বা ২ তারিখের (সেপ্টেম্বর) যেদিনই বোর্ড মিটিং হয়, সেদিন একটু ভিন্নতা পাবেন আপনারা। এবারের ইলেকশন একটু ডিফারেন্ট হবে। অন্যবারের মতো নাও হতে পারে। দ্যাটস হোয়াট আই উইল প্রোপোজ অ্যান্ড আই হোপ ইট উইল বি একসেপ্টেড। ক্রিকেট ইজ টেকিং টু মাচ টাইম। টু মাচ টাইম। জালাল ভাই (বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুস) গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড। ববি ভাই (বোর্ড পরিচালক) জিম্বাবুয়ে। উনারা জানেন, আমি কতটা সময় ধরে খোঁজ-খবর নেই। সবার সাথে কথা বলা। ইটস টেকিং টু মাচ টাইম।’

‘আর আমার একটা খারাপ দিক হচ্ছে, হারটা মেনে নিতে পারি না। বাংলাদেশ হারলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমার বউ-বাচ্চারা কেউ সামনে আসে না কেন। সো আমাকে ডাক্তারদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ক্রিকেট থেকে যত সম্ভব দূরে সরে যেতে। অন্তত বোর্ডে থাকলেও এ জিনিসগুলো যেন আর না করি।’

‘অন্তত বোর্ডে থাকলেও এই জিনিসগুলো যেন আর না করি’- এই শেষ লাইনেই পরিষ্কার, তিনি থাকতে পারেন এবং ভেতরের খবর হচ্ছে- নাজমুল হাসান পাপনই বিসিবিতে পরবর্তী সভাপতি হিসেবে থাকছেন।

আসলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নাজমুল হাসান পাপনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো সে অর্থে কেউ নেই। তার বিপক্ষে কেউ বোর্ড সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বা আরেকটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ প্যানেল তৈরির কোনো খবরও এখন অবধি শোনা যায়নি। কাজেই ধরেই নেয়া হচ্ছে, নাজমুল হাসান পাপন আগামী চার বছরও বোর্ড প্রধান থাকবেন। বোর্ড পরিচালক, কাউন্সিল সবার মাঝেই তার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। সব ক্ষেত্রেই তার অবস্থান অনেক সুসংহত। তাই তার কোনো প্রতিপক্ষ প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এখন দেখার বিষয় হলো, প্যানেলটা কেমন হয়? মানে এখন যে পরিচালনা পর্ষদ আছে, সেটাই থাকবে, নাকি রদবদল ঘটবে? ঘটলে কারা থাকবেন? আর কাদের না থাকার সম্ভাবনা বেশি?

একদম ভেতরের খবর, ‘এবার বোর্ড পরিচালনা পর্ষদে মোটামুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনই ঘটবে। অন্তত চার-পাঁচজন বর্তমান পরিচালকের আগামীতে বোর্ডে না থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি।’

বলে রাখা ভালো, বোর্ডের দীর্ঘদিনের সঙ্গী আফজালুর রহমান সিনহা পরলোক গমন করেছেন। তার পদটি এখন শূন্য। একইভাবে ক্লাব পাড়ায় ক্যাসিনো এবং মোহামেডান ক্লাবে ওই ন্যায়বহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত ক্লাবটির সাবেক ডাইরেক্টর ইনচার্জ তথা বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিসিবিতে পদ হারানোটা মোটামুটি নিশ্চিত।

 

তার ক্লাব মোহামেডানের পরিচালনা পর্ষদে এবার আর নেই লোকমান হোসেন ভূঁইয়া নিজেই। ভোটার হিসেবে ভোট দিতে পারলেও তিনি নির্বাচন করেননি বা করার মতো অবস্থা ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, মোহামেডান ক্লাবের মতো বিসিবি পরিচালক পদও হারাচ্ছেন লোকমান হোসেন।

এই দু’জনার জায়গায় দু’জন নতুন পরিচালক নিয়োগ দিতেই হবে। দু’জন নতুন মুখ আসবেনই- এটা নিশ্চিত। এর বাইরে আরও জনা চারেক পরিচালককে আগামীতে বোর্ডে দেখা নাও যেতে পারে। ওই তালিকায় তিনটি নাম উচ্চারিত হচ্ছে খুব বেশি। তারা হলেন তানজিল চৌধুরী, হানিফ ভূঁইয়া এবং আশফাকুল ইসলাম টিটু।

অত্যন্ত দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট রেডিসন হোটেলে বোর্ডের এজিএমে অংশ নেননি হানিফ ভূঁইয়া ও তানজিল চৌধুরী। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মোহামেডানের অন্যতম শীর্ষ ক্রিকেট কর্মকর্তা হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন হানিফ ভূঁইয়া। বিনয়ী হানিফ ভূঁইয়ার ক্রিকেট ও ক্লাব পাড়ায় গ্রহণযোগ্যতাও আছে যথেষ্ট ।

ক্লাব পর্যায়ে তার সম্পৃক্ততা যথেষ্ট। মোহামেডান ক্রিকেট দল গঠনে এক যুগের বেশি সময় ধরে রাখেন কার্যকর অবদান। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি লে. কর্নেল (অব.) বজলুল হুদার শ্যালক হওয়ার কারণে তার বোর্ডে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাঝে তার বোর্ডে থাকা নিয়ে একটা বিতর্কও তৈরি হয়।

সেই বিতর্কের পর থেকে সম্পর্ক ছেদ না করলেও বোর্ডের কার্যক্রম ও কর্মকাণ্ডে সেভাবে জড়িত নন হানিফ। এমনকি সর্বশেষ এজিএমেও উপস্থিত হননি। যতদূর জানা গেছে, তিনি নিজেই এবার আর বোর্ডে থাকতে উৎসাহী নন। তাই পরের বোর্ডে হানিফ ভূঁইয়ার থাকার সম্ভাবনা খুব কম।

এছাড়া না থাকার দলে শোনা যাচ্ছে আরও তিনটি নাম- তানজিল চৌধুরী, শওকত আজিজ রাসেল এবং ঢাকা বিভাগের সৈয়দ আশফাকুল হক টিটু। মাঝে শোনা যাচ্ছিল, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির এবং আহমেদ নজিবও নাকি নাও থাকতে পারেন। তবে সর্বশেষ খবর, তারা দুজনই হয়তো থাকছেন।

সর্বশেষ এজিএম শেষে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন আ জ ম নাছিরকে সাথে নিয়েই সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে ওঠেন। আহমেদ নজিবের শারীরিক অবস্থা মাঝে ভালো ছিল না। তিনি অসুস্থ ছিলেন। এখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাই তার বোর্ডে থাকা নিয়েও সংশয় কেটে গেছে।

এর বাইরে এখন যারা বোর্ড পরিচালক হিসেবে আছেন, তাদের কাউকে নিয়ে সেভাবে কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। তবে মাহবুব আনাম, জালাল ইউনুস, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন, নাইমুর রহমান দুর্জয়, শেখ সোহেল, কাজী ইনাম আহমেদ, গাজী গ্রুপের গাজী গোলাম মোর্তুজা পাপ্পা, সিলেটের নাদেল চৌধুরী, বরিশালের আলমগীর হোসেন আলো, রাজশাহীর সাইফুল ইসলাম, রংপুরের অ্যাডভোকেট আনোয়ার এবং পাবনার স্বপনের থাকা প্রায় নিশ্চিত।

নতুন করে দু-তিনটি নাম উচ্চারিত হচ্ছে। তারা দুজনই বয়সে তরুণ। একজন দেশের ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের সঙ্গী ও বিসিবির সাবেক অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা প্রয়াত আফজালুর রহমান সিনহার ছেলে ফাহিম সিনহা। অন্যজন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন। এ দুজনকে আগামীতে বোর্ডে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।