প্রয়াত মেয়র শেখ শওকত হোসেন হীরনের হাত ধরে বরিশাল নগরী পাল্টে যাওয়ার কথা আবার উঠে আসল সাত মেয়র প্রার্থীকে নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে। আগামী ৩০ জুলাই হতে যাওয়া ভোটকে সামনে রেখে প্রার্থী হওয়া একজন বললেন, হীরন ছাড়া বরিশালে কেউ কাজ করেনি।
শুক্রবার বেলা ১১ টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হলে ‘জনগণের মুখোমুখি’ হন আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়া ছয় মেয়র প্রার্থী। একই মঞ্চে বসে তারা নির্বাচিত হলে কে কী করবেন, তা তুলে ধরছেন ভোটারদের মধ্যে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু তুলে ধরেন ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়র থাকা হীরনের স্মৃতি।
আওয়ামী লীগের এই নেতা পাঁচ বছরে বরিশাল নগরে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছিলেন। তারপরও ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান। আর ওই নির্বাচনে জয়ী বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ডে বরিশালবাসীর মধ্যে হতাশা স্পষ্ট। এমনকি বিএনপি নেতা-কর্মীরাও প্রকাশ্যে বলে থাকেন বিষয়টি। আর বিএনপি তাকে প্রার্থী না করে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ তুলে দিয়েছে সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের হাতে।
এবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু বলেন, ‘বিগত সময়ে মেয়রের পদে থেকে কে কী করেছেন তা সবাই জানে। শুধু শওকত হোসেন হীরন কাজ করেছেন।’
‘আমি বাজে কমিটমেন্ট দেব আর নির্বাচিত হলে ভুলে যাব, সেটা হতে দেয়া উচিত নয়। ভোটাররা এক দিনের জন্য ভোট দিবেন আর যোগ্য প্রার্থী না হলে ৫ বছরের জন্য পস্তাবেন। পার্সেন্টিসবাজ, দুর্নীতিবাজদের ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।’
‘আমার ভোট চাইতে লজ্জা করে। কারণ, আমি বরিশালবাসীর জন্য কিছু করিনি। তবে দয়া করে যদি ভোটাররা ভোট দেন তবে বরিশালের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখব।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গণরায় মেনে নেয়ার জন্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি যারা নির্বাচিত হবেন তাদের করপোরেশনে নামে-বেনামে কোন ঠিকাদারি না করার জন্য আহ্বান জানান।
বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার বলেন, ‘মেয়র হলে নগর উন্নয়নে পরিকল্পনা করে জনগণের সাথে মিলেমিশে কাজ করব। খাল খনন, জলাবদ্ধতা নিরসন, শহর রক্ষাবাধ নির্মাণ, নবীনদের জন্য কর্মসংস্থানসহ নানান সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করব।বরিশালকে সুন্দর নগরী করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।’
নিজে মেয়র থাকাকালে কী করেছেন, সেটিও তুলে ধরেন সরোয়ার। বলেন, ‘আমি বিগত সময়ে যখন মেয়র ছিলাম তখন সিটি করপোরেশনের কোন জায়গা লিজ দেইনি, ১১ টি মার্কেট করেছি, কালেক্টর পুকুর দখলমমুক্ত করেছি, বাড়ি-ঘর, মন্দির দখলমুক্ত করেছি। এমনকি সন্ত্রাস করতে দেবো না কমিটমেন্ট করেছিলাম তাও করতে দেইনি। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক করেছি।’
বাসদের মনিষা চক্রবর্তী বলেন, ‘নির্বাচিত হলে নগর কাউন্সিলের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। আমি মেয়র হলে কর্মজীবী নারী হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টারসহ নারীবান্ধব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি সমাজকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে পাড়ায় পাড়ায় পাঠশালা তৈরি, রচনা প্রতিযোগিতা, গণিত উৎসব, সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা করা হবে।’
সিপিবির আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে দৃষ্টিনন্দন একটি নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন, সড়ক উন্নয়নসহ নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। নগরের বস্তি এলাকার মানুষদের পুনঃবাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন (তাপস) বলেন, ‘জনগণের উন্নয়ন আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি দিতে চাই না। জনগণ সবার ওপরে। নির্বাচিত হলে নগরভবনে নগরপিতা হিসেবে নয়, সেবকভবনে নগরের সেবক হিসেবে বসতে চাই।’
ইসলামী আন্দোলনের ওবাইদুর রহমান মাহবুব সৎ লোককে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করার জন্য দুর্নীতিমুক্ত করা হবে। পার্সেন্টেজমুক্ত করপোরেশন গড়া হবে।’
সুজননের বরিশাল মহানগর কমিটির সভাপতি শাহ সাজেদর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক রনজিৎ দত্তসহ ভোটার ও বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা।