শামীম আহমেদ ॥
দিন যতো সামনে এগুচ্ছে বরিশাল সিটি করপোরেশেনর ত্রাণ সহায়তার ব্যপ্তি ততোই ঘটছে। নগরের ছোট-বড় বস্তি বা কলোনিগুলোতে বসবাসকারী কর্মহীন অসহায় ও দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে, এবারে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে বসবাসকারী কর্মহীন অসহায় ও দুস্থ মানুষদের তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানাগেছে, গেলো মার্চের শেষদিকে নগরের ৪০ হাজার অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেন বরিশাল সিটি করপোরেশেনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথমদিকেই নগরের প্রায় ১৬ টি ছোট-বড় বস্তিতে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান শুরু করা হয়। বস্তিতে খাদ্য সহায়তা প্রদানের পর এখন ওয়ার্ডপর্যায়ে খাদ্য সহায়তা কর্মহীন অসহায় মানুষদের বাড়িতে পৌছে দেয়া হচ্ছে।
যার তালিকাও সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে মাঠ পর্যায়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরা। কাউন্সিলররা জানান, মেয়রের নির্দেশনা মোতাবেক প্রকৃত অসহায়দের তালিকা করা হয়ে থাকে। মেয়রের নির্দেশনা অনুযায়ী জনসমাগম এড়াতে ওই তালিকা অনুযায়ী পরবর্তীতে সিটি করপোরেশেন কর্মীরা এসে খাদ্য সহায়তার প্যাকেট ঘরে ঘরে পৌছে দিচ্ছেন। এসময় সার্বিক কাজ দেখভালের জন্য কাউন্সিলরদের সাথে ওয়ার্ড আওয়মীলীগের নেতারা উপস্থিত থাকেন।
আর এভাবে গতকাল রোবাবর পর্যন্ত বরিশাল নগরের প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের কাছে এ খাদ্য সহায়তা পৌছে দেয়া হয়েছে বলে সিটি করপোরেশন সূত্রে জানাগেছে। আর এ খাদ্য সহায়তার প্যাকেটগুলো গত ২৯ মার্চ থেকে নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ সেরিনয়াবাত ভবন অর্থাৎ মেয়রের বাসভবনের পেছনের মাঠে বসে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যারমধ্যে ১০ কেজি করে চাল, ৫ কেজি আলু ও ২ কেজি মসুর ডাল থাকছে। এদিকে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক সরকারি ছুটি ঘোষনা করার পর বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি হটলাইন ব্যবস্থা চালু করেন।
নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজার কেন্দ্রিক চালু করা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি নগরকে নিয়মিতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি শুরু থেকেই নগরের অলিতে-গলিতে জীবানুনাশক স্প্রে করার কার্যক্রম হাতে নেয়। এরপর পাশাপাশি মশক নিধনেও মশার ওষুধ (স্প্রে) ও নগরজুড়ে ফগার মেশিন দিয়ে ধোয়া দেয়ার ব্যবস্থা চলমান রাখে।
আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ যেসব নির্ধারিত জনবলের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে সেইসব কর্মীদের নিরাপত্তায় বুট জুতো, গ্লোবস ও মাস্ক দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ও ভ্যাটেনারি চিকিৎসক ডাঃ রবিউল ইসলাম। আর এসব কাজ সমন্বয় করার পাশাপাশি ওয়ার্ড ভিত্তিক কাজগুলো আরো বেগবান করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় ও আলোচনা কার্যক্রম শুরু করেন মেয়র। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, গত ১৪ দিন ধরে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে তাতে কোন অভিযোগ, অনিয়ম, ত্রুটি কিংবা সমস্যার কথা কেউ বলতে পারবে না।
কারণ মেয়র এ কাজের তদারকি নিজেই সবসময় করছেন। আমরা যারা মেয়রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছি নিয়মিতো ভিডিও কনফারেন্সটা তাদের জন্য অনেক বাস্তবমুখি পদক্ষেপ। কোন কাজটি কিভাবে করা উচিত এবং কোন সমস্যা হলে কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত সে বিষয়ে সরাসরি মেয়রের সাথে যোগাযোগ স্খাপন করে কথা বলছি। ফলে সভা সমাবেশের মতো জনসমাগম এরিয়ে মেয়রের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনাও সরাসরি পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ জানান, বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের কর্মহীন ৪০ হাজার মানুষের তালিকা করে সবার ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৫ হাজার পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডে অন্যান্যদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ছাড়াও যারা হাত পারতে পারেন না সেইসব মানুষের তালিকা তৈরী করে তাদের ঘরেও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুরু হয়েছে বলে জানান সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। পাশাপাশি তিনি সবাইকে নিজ নিজ ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।