দেশের বারোটি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে একমাত্র রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিলেন। যদিও প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অন্য দুই দলের প্রার্থী চেয়ে অনেকে এগিয়ে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বাদে, দেশে অন্য কয়টি সিটি নির্বাচনের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মাঝেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। এটা অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এবার বোধহয় পরিচিত এমন দৃশের অবতারণা অন্ততপক্ষে বরিশাল সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলা যাচ্ছে না। কারণ, ইতোমধ্যেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মূল লড়াইয়ে চলে এসেছেন। ফলে বরিশালের নগর পিতা হওয়ার লড়াইয়ে আছেন তিন প্রার্থী।
আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৩টি ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য মেয়র ও কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে বেঁছে নেবেন।
সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বাদে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয় জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ (নৌকা), বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব (হাতপাখা), জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল), বাসদের মনীষা চক্রবর্তী (মই) ও সিপিবির একে আজাদ (কাস্তে)।
নির্বাচনে ছয় মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় তিন জন। আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিএনপির প্রার্থী সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব।
আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে আকস্মিক মারা যান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন (হিরন)। এরপরই সাদিক বরিশালের রাজনীতিতে জায়গা করে নেন। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
মজিবর রহমান সরোয়ার। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। এ ছাড়া সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য। বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি।
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরিশালে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মরহুম শওকত হোসেন হিরণকে হারিয়েছিলেন ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এর আগে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মরহুম শওকত হোসেন হিরণ মেয়র নির্বাচিত হন তখন দল সমর্থিত এবং বিদ্রোহী মিলিয়ে বিএনপির প্রার্থী ছিল ৩ জন। তারপরও জয়ী হতে বেগ পেতে হয় হিরণকে। মাত্র ৪-৫শ’ ভোটের ব্যবধানে জেতেন তিনি। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনে এখানে সবসময় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জেতে বিএনপি। সঙ্গত কারণেই বরিশালতে বিএনপির ঘাঁটি বলা হয়।
উপরোক্ত সমীকরণে বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপি বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে বলে মনে করা হলেও এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। বরিশালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রার্থী দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিএনপির জন্য এটা চরম ঝুঁকি হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে কিছুটা টেনশনে আওয়ামী লীগ শিবিরও। সব মিলিয়ে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কী ঘটে তা নিয়ে ভাবনায় বরিশালের জনগণ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব প্রচার-প্রচারণায়ও বেশ এগিয়ে। বিগত ২-৩ বছরে দেশে যত নির্বাচন হয়েছে তার প্রায় সব ক’টিতেই অংশ নিয়েছে দলটি। তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাও ঈর্ষণীয়।
এখন পর্যন্ত দেশে যত সিটি নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে রংপুর এবং নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনকে ধরা হয় মোটামুটি কলুষমুক্ত। এই দুটি সিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা ভোট পেয়েছে যথাক্রমে ২৪ হাজার ৬ এবং ১৩ হাজার ৯১৪ ভোট।
এছাড়া ঢাকা উত্তরে ১৮ হাজার ৫০, দক্ষিণে ১৪ হাজার ৭৮৪, খুলনায় ১৪ হাজার ৩৬৩ এবং গাজীপুরে ২৬ হাজার ৩৮১ ভোট পায় দলটির প্রার্থীরা। এমনকি ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনে প্রায় ২৯ হাজার ভোট পায় এই দলের প্রার্থী সৈয়দ মুফতি ফয়জুল করিম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বরিশালে তাদের ৪০-৪৫ হাজার ভোট ব্যাংকের কথা বলছেন। তাদের দাবী মতে হাতপাখার প্রার্থী ওই পরিমাণ ভোট পেলে নির্বাচনে নতুন রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ মূল দুই দলের বাইরে চলে যাবে নগর পিতার চেয়ার। তাদের যুক্তি মোট ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার। তন্মধ্যে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট, আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ পান ৬৬ হাজার ৭৪১ ভোট। এমতাবস্থায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ৪০-৪৫ হাজার ভোট পেলে সব হিসাব উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনি বরিশালের সবচেয়ে বড় কওমি মাদরাসা জামিয়া মাহমুদিয়ার মহাপরিচালক। সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গিয়ে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। হেফাজত আমিরের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে।
তাছাড়া বরিশাল পীর সাহেব চরমোনাইয়ের নিজ এলাকা। চরমোনাইর পীর মুফতি রেজাউল করিম, মুফতি ফয়জুল করিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন তাদের প্রার্থীদের পক্ষে। আর এভাবে নানা প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মূল প্রতিযোগী হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন।
ফলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দু’দলের দ্বৈরথের বদলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রূপ নিয়েছে ত্রিমুখী লড়াইয়ে।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com