বরিশাল সিটি নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে নগর রাজনীতির দৃশ্যপটে আপাতত নেই মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের চাবি এখনও তাঁর হাতে। নগরের ৭৫ সদস্যের কমিটি এবং ৩০টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সবাই সাদিক অনুগত। তাঁর কথার বাইরে যান না কেউ। গত সাড়ে ৩ বছর এভাবেই চলেছে।
সাদিকের মনোনয়নবঞ্চনার পরও অনুসারীরা আনুগত্য বহাল রেখেছেন। তারা এখন পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী সাদিকের চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের ধারেকাছেও নেই। সাদিক অনুসারীদের এমন আনুগত্যে অস্বস্তিতে পড়েছেন প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত ও তাঁর সমর্থকরা। কেন্দ্রের চাপে শেষ পর্যন্ত মাঠে নামলেও তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের নির্বাচনে তখনকার জনপ্রিয় মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরনের পরাজয়ের উদাহরণ সামনে আনা হচ্ছে। এসব নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। নির্বাচনের আগে মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হতে পারে এমন গুঞ্জনও আছে। খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থকরাও জোরালোভাবে একই দাবি জানাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থক মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, ওয়ার্ড নেতাদের সহযোগিতা পাওয়া নিয়ে আমরা সন্দিহান। খোকন সেরনিয়াবাত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বরিশালের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। যারা নৌকার পক্ষে কাজ করবে না, তাদের ভোগতে হবে।
আরেক সমর্থক বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার বলেন, যারা নগরবাসীকে শোষণ করছে, চাঁদাবাজি করছে তাদের নেতৃত্বে মহানগর কমিটি থাকতে পারে না। এই কমিটি থাকলে সিটি নির্বাচনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবেন না। ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীকে চাপের মুখে রেখেছেন সাদিকের লোকজন।
মহানগর যুবলীগের সদস্য মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাধারণ কর্মীদের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের বাসায় না যেতে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে শওকত হোসেন হিরনের পরাজয়ের পেছনে সাদিক পরিবারের ষড়যন্ত্র ছিল। মহানগর ও ওয়ার্ড কমিটি বহাল রেখে নির্বাচন করলে খোকন সেরনিয়াবাতও ঝুঁকিতে থাকবেন।
শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের পর শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে মহানগর আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। এই হিসেবে ৩ বছর মেয়াদি নগর কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। নগরীতে বিতর্কিতদের নিয়ে এক বছর পরে গঠন করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এই কমিটি বহাল থাকলে ওয়ার্ড পর্যায়ে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সম্মেলন হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি। সম্মেলনের দিন হিসাব করলে কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন থেকে ধরা হলে মেয়াদ এখনও এক বছর রয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো পক্ষ নতুন কমিটি চাইতেই পারে। কেননা এখন পরিস্থিতি ঘুরে গেছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার খোকন সেরনিয়াবাতের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বক্তৃতায় বলেন, মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ যৌথ বর্ধিত সভা করে সিটি নির্বাচনের কলাকৌশল নির্ধারণ করবে। এর আগে নেতাকর্মীর সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় একই কথা বলেছেন ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
ওয়ার্ড কমিটি : ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর মহানগর সম্মেলনের আগে কয়েক মাসজুড়ে ঘটা করে নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে পৃথক সম্মেলন করা হয়। প্রতিটি সম্মেলনে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও গঠন হয়নি। মেয়রের আস্থাভাজনদেরই পদায়ন করা হয়েছে। এতে বঞ্চিত হন মহানগর সদর আসনের সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীরা। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। ফলে সাদিকের প্রতি অনুগত তারা।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com