তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বরিশালে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এরই মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে তরুণসহ সাধারণ নগরবাসীর মধ্যে।
ঘর থেকে শুরু করে অফিসপাড়া ও আড্ডাস্থল সবখানেই চলছে নির্বাচনী আলোচনা। এবার কে হবেন নগরপিতা? এমন চিন্তা-চেতনার বাহিরে বর্তমানে কোনো দলের কে হচ্ছেন প্রার্থী এমন আলোচনাই বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে তরুণদের আধিক্য বিগত সময়ের থেকে প্রকট থাকবে।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০০২ সালের ২৪ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রতিষ্ঠার পর ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত জোট সরকার আমলে প্রথম মেয়র হন বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় পরিষদে মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক প্রয়াত অ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরণ। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে জননন্দিত মেয়র হিরণকে হারিয়ে বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল নির্বাচিত হন।
চলতি বছরের ২৩ অক্টোবরে মেয়াদ উর্ত্তীণ হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনে বর্তমান পরিষদের। এরইমধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই হবে বিসিসির নির্বাচন।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। তাদের মতে সঠিক সময়ে নির্বাচন হলে শক্তিশালী হবে স্থানীয় সরকার কাঠামো।
বিশিষ্ট নাট্যজন সৈয়দ দুলাল বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় আমরা বেশ আনন্দিত। আমরা চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো প্রতিবারের সময়মতো ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হোক। স্থানীয় প্রশাসন বা স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা শক্তিশালী হোক। নগরভবনের যিনি দায়িত্বে থাকবেন তার অর্থনৈতিক ক্ষমতা, তার প্রশাসনিক ক্ষমতা, তার প্রয়োগ ক্ষমতা স্বাধীন থাকুক। তাহলে নগর উন্নয়ন ব্যাপকভাবে হওয়া সম্ভব।
তরুণ প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো দলেরই উচিত হবে প্রার্থী এমন কাউকে দেওয়া যিনি এই নগরে থাকেন ও সাধারণ মানুষের পরিচিত মুখ। যিনি নগরের উন্নয়নের কথা ভাবেন, সুখে-দুঃখে নগরবাসীর পাশে থাকবেন। সাধারণ মানুষ তার দুঃখ-দুর্দশার কথা গিয়ে বলতে পারবেন’।
তিনি আরও বলেন, ‘সব কাজে নিয়মানুবর্তিতা থাকা প্রয়োজন। সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়াটা এরই ধারাবাহিকতা। ভোট নয় উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা নগরপিতার আসনে নির্বাচিত মানুষটিকে দেখতে চাই’।
এদিকে ২০ দলীয় জোট ও মহাজোটের প্রার্থীরাই মূল প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হলেও, বিসিসির নির্বাচনের ইতিহাস বলে বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত বরিশালে মূল লড়াইটা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবনেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তবে দল চাইলে নির্বাচন করতে দ্বিমত নেই এ দলের বেশ কিছু নেতার। আর সংসদীয় বিরোধীদল জাতীয়পার্টিও প্রার্থী দেওয়ার কথা বলছেন বেশ জোড়েসোরে। সেক্ষেত্রে জাপার কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন তাপস নাম শোনা যাচ্ছে প্রার্থী হিসেবে।
এছাড়া বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল আবারও প্রার্থী হতে চাইলেও তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাসহ স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ে অনেকে। তবে এদের মধ্যে তরুণ হিসেবে প্রার্থীর খাতায় নাম রয়েছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেত্রী আফরোজা খানম নাছরিনের।
বাসদের প্রার্থী হিসেবেও তরুণ নারীনেত্রী ডা. মনিষা চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিউনিস্টপার্টি ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে দলীয় ও জোটের সিদ্ধান্তই প্রার্থিতা চুড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। সব শঙ্কা আর সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে আসন্ন বিসিসির নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এমনটাই প্রত্যাশা পাঁচ লাখ নগরবাসীর।