বরিশাল সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গজনী দীঘি রক্ষায় জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

মোঃ শাহাজাদা হিরা:: বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী গজনী দীঘি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা অপুর্ব দৃষ্টি নন্দন গজনীর দীঘি। সরকারি দীঘিটি দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু ব্যক্তির দ্বারা দীঘির পাড় দখল করে আসছে দখলদার দীঘিটি বেহাত হওয়ার পথে। এখানে অবৈধভাবে মাছ শিকার করার পাশাপাশি রাতের আঁধারে দীঘির পাড়ের গাছ কেটে নেয়ার মতন অপরাধ সংঘটিত হয়। রাতের আঁধারে জুয়ার আসর বসার পাশাপাশি চলে মাদকের বিক্রয় এবং সেবনসহ অনৈতিক কর্মকান্ড। সেখানকার বসবাসকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, কিছু ঊশৃংখল যুবকের হাতে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরা হচ্ছে লাঞ্চিত। দীঘিটি উদ্ধারে এরিমধ্য জেলা প্রশাসক এস, এম, অজিয়র রহমান এর নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন বরিশাল সদর এবং সহকারী কমিশনার ভুমি এর নেতৃত্বে দীঘি উদ্ধার এবং এর উন্নয়নে কাজ করছে প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ গজনীর দীঘি পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরিশাল সদর মোঃ মুনিবুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরিশাল সদর মোঃ মেহেদী হাসান। প্রতি বছর গজনী মেলা মিলতো এখানে। বাতাস ফকিরের আস্তানায় হাজার হাজার মানুষ আসতো কল্যাণের আশায়। কেউবা দীঘিতে গোসল দিতেন, কেউবা মাছকে দিতেন খাবার। ঐতিহ্যের সেই নিদর্শন এখন বেহাত হওয়ার পথে। বরিশাল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আমরা এটিকে বেদখলমুক্ত করতে কাজ করছি। দীঘিটি উন্নয়ন এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ে লিজ দেওয়া যায় কিনা সেটা দেখা হবে।

জানা গেছে, সুলতানী আমলে গজনীর কোনো এক সুলতান বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনে এই দীঘী খনন করেন এবং স্থানীয় জাগীরদার বা জমিদারকে এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেন। যে কারণে এ দিঘীটির নাম গজনীর দিঘী ছিল। আহঞ্জী বা ইসলাম ধর্মের প্রচারকারী হবার সুবাদে বরিশালের চাঁনপুরা ইউনিয়নের মানুষের কাছে আহঞ্জীদের আদিপিতা ইয়ারউদ্দিন আখনের গ্রহনযোগ্যতা ছিল অনেকটাই জমিদারদের মত দেখতে। বিচার আচার, সামাজিক যেকোন সমস্যার সমাধানে এ অঞ্চলের মানুষেরা এখনো আহঞ্জী (বর্তমান তালুকদার) বাড়ি নির্ভর। যে কারণে গজনীর দীঘীটাও আহঞ্জীদের নিয়ন্ত্রণে দেন তদানিন্ত গজনীর সুলতান। সমাজে মুখে মুখে গজনীর দীঘিকে ঘিরে বিভিন্ন রূপ কথা রয়েছে। আহঞ্জীরা গজনী কে দান করে দেন জনগণের কল্যানে বিশুদ্ধ পানির সুবিধা গ্রহণে। স্বাধীনতার পরেও গজনীর মেলা বা থৈল ছিল ঐ অঞ্চলের সেরা বিনোদন। সেখানে নিয়মিত ঘৌড় দৌড় হতো। পরবর্তীতে নাসির নামে এক যুবক হত্যার ঘটনায় ঐ মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়। খুবই চমৎকার আর বিশাল এই পুকুরটি পিকনিক স্পট করার কথা উঠেছিল ১৯৮৫ সালে। সেই থেকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে দীঘির রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পালন করছে প্রশাসন। পুকুরের দক্ষিণ পাড় পুরোটাই দখল করে গড়ে উঠেছে বসতভিটা। পূর্বপাড়ও অনেকাংশে দখল হয়ে গেছে। তাই দীঘিটি উদ্ধারে কাজ করছে প্রশাসন।